পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছ-একটি আবার স্কুলে যায়, তাদের খাইয়ে-গাইবে তৈরি করে স্কুলে পাঠাচ্ছেন ; কখনো-বা আমার গাড়িতে করে বাজারটা ঘুরে আসছেন । সে বাড়ির নীচের তলায় থাকে মান্ধাটা নামে এক বুড়ো ইটালিয়ান মিউজিক মাস্টার আর তার মেয়ে । বুড়ে বাপেতে মেয়েতে থাকে বেশ ; রোজ সকালে মেয়ে পিয়ানো বাজায়, বাপ বাজায় বেহালা । কুর আসে ভেসে,উপরে বসে আমি সেই বিলিতি স্থর শুনি আর ছবি আঁকি । একদিন সকালে রোজকার মতো ছবি আঁকছি ; নীচে থেকে বেহালার স্বর এল কানে, উদাস করে দিলে। হাত বন্ধ করলুম তুলি টানার কাজ থেকে, স্থর তো নয় যেন বেহালাটা কাদছে । সেদিন সে স্বর স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলে, বেহালার ছড়ি বেহালার তার আর যে বাজাচ্ছে তারও মানসতন্ত্রী এক হয়ে গেছে। আজ আর পিয়ানো নেই সঙ্গে । গিলার্ডিকে বললুম, সাহেব, আজ বেহালা যেন কাদছে মনে হচ্ছে, কেন বলে! তো ? এমন তো শুনি নি কখনো ? সাহেব বললেন, "চুপ চুপ, জান না বুড়োটির মেয়ে কাল চলে গেছে বাড়ি ছেড়ে ? সেদিন আর ছবি আঁকা হল না আমার । খানিক বাদে আস্তে আস্তে নেমে এলুম। সিড়ির কাছের ঘরটিতে দেখি বুড়োটি বসে আছে চেয়ারে কাধে বেহালাটি রেখে মাথা হেঁট করে, একমাথা শাদ চুল পাখার হওয়ায় উড়ছে। বুঝেছিলুম সেদিন, মনে ধরল আজ স্বরের আগুন । অন্তর বাজে তো যন্তর বাজে। মনের স্পর্শ নইলে গাওয়াও খুথা, বাজানো বৃথা, ছবি আঁকাও বৃথা, এ কথা জেনে নিলে মন। ছেলেছোকরার আঁকে দেখবে— দেয়ালি পট, ঝাড়লণ্ঠন, একটু রঙ রেখা, ভুলে গেল তাতেই। তার পর এল রসের প্রৌঢ়তা, যেমন মোগল আমলের আর্টের মধ্যে দেখি । তাদের রঙ, সাজসজ্জা, সে কী বাহার 1 তার পর সেই বাহার থেকে পৌছল গিয়ে রসের আরো উচু ধাপে আর্ট, তবে এল বাইরেররঙচঙ-ছুট ছবি সমস্ত, যেন মেঘলা দিনের ছায়া, স্নিগ্ধ গম্ভীর। আর্টের এই কয়টি সোপান মাড়াতে হবে, তবে হয়তো আর্টিস্ট বলাতে পারব নিজেকে । একবার কেষ্টনগরের এক পুতুলগড় কারিগর জ্যোতিকা’র একটা মূর্তি গড়লে । অমন তো সুন্দর চেহারা তার, যেমন রঙ তেমনি মুখের ডৌল— মূর্তি গড়ে তাতে নানা রঙ দিয়ে এনে যখন সামনে ধরলে সে যা বিত্র কাও হল, শিশুমনও তা পছন্দ করবে না । মাটির কেষ্টঠাকুরের পুতুল বরং বেশি ভালো তার চেয়ে । পুতুল গড় সোজা ব্যাপার নয়। তার গায়ে এখানে ૨ 8ાજી