পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবধি বসে থাকতেন আর মন্দিরে ভোগ দিতেন। অমৃতসরের মন্দিরের সব লোকের বাবামশায়কে চিনত, হোটেলের খানলাম। বাবুর্টির অবধি। একবার বড়দাদার অমৃতসর যান, যে হোটেলে বাবামশায় থাকতেন সেই হোটেলেই তার উঠেছেন। হোটেলের এক বুড়ে বাবুর্চি তাদের জিজ্ঞেস করলেন বাবামশায়ের নাম ক’রে যে, সেই বাবু কোথায় ? তিনি যখন পশ্চিমে ওইরকম ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন আমরা তখন আর কতটুকুই বা, কিন্তু আমাদের কাছে নিয়মমত চিঠি দিতেন। শুধু চিঠি দেওয়া নয়, আমাদের চিঠি লেখা শেখাতেন। কী ভাবে লিখতে হবে, কোথায় কী ভুল হল, চিঠি লিখে লিখে সব ঠিক করে দিতেন। চিঠি লেখা দস্তুরমত শিক্ষা করতে হয়েছে আমাদের। বাড়িতে এক পণ্ডিত আসত, তার কাছেও আমাদের চিঠি লেখার শিক্ষা হত। বাবামশায় আমাদের আবার লিখতেন কার কী চাই জানাতে । একবার তিনি তখন দিল্লি আগ্রার দিকে। সেই হিন্দুমেলাতে যে দিল্লির মিনিয়েচার দেখেছিলুম সেই ছিল আমার মনে। আমি লিখলুম, আমার জন্য আগ্র দিল্লির ছবি আনতে । বাবামশায় ফিরে এলেন ; দাদারা যে যা চেয়েছিলেন, বোধ হয় ভালো ভালো জিনিসই হবে, সবাই সবার ফর্মশিমাফিক জিনিস পেলেন । আমার জন্য বের হল একটা কাগজের তাড়া । আমি ভেবেছিলুম যে, হিন্দুমেলায় দিল্লির মিনিয়েচারের মতো কিছু একটা হবে। কাগজের তাড়া খুলে দেখি আগ্র দিল্লির কতকগুলো পট। .শাদা কাগজের উপরে যেমন কালীঘাট লক্ষ্মেীয়ের পট হয় সেইরকম হাতে লেখা আগ্রা দিল্লির ছবি আঁকা। এখন আর সে-সব পট পাওয়াই যায় না। সেগুলি থাকলে আজ খুব দামি জিনিস হত। তখন কী আর করি, তা-ই খুলে খুলে দেখলুম, কয়েকদিন বাদে ছিড়ে কুটে কোথায় উড়িয়ে দিলুম। জানি কি তখন সে-সব জিনিসের মূল্য । বাবামশায় আমার কথা বলতেন, ‘ওকে আর বিদেশে পাঠাব না। ও আমার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে ভারতবর্ষ দেখবে, ভারতবর্ষ জানবে। এ দেশটাই ওকে দেখাব ভালো করে।’ তাই হল । বাবামশায় মারা গেলেন, আমার আর বিদেশে যাওয়া হল না, এখনো ভারতবর্ষকেই দেখছি, জানছি। বড়ো হবার পরে যখন ছবি আঁকা নিয়েই মেতে রইলুম, মার মনে বড়ো ভাবনা হল যে, এই ছেলেটার লেখাপড়াও হুল না, বিষয়কর্মও শিখল না, কিছুই হল না। তার পর যখন দিল্লির দরবার থেকে সোনার মেডেল এল, আট স্কুলের ভাইস ૨૯૪૭