পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জমজমাট শোভাযাত্রার দৃপ্ত রাস্তার উপর খানিক বলক টেনে বেরিয়ে যেত গড়ের মাঠে— আতর গোলাপের খোশবৃতে যেন উত্তর দিকটা মাত করে দিয়ে । এরই একটু পরেই নন্দ ফরাশ দু'হাতে আঙলের ফাকে বড়ে বড়ো তেলবাতির সেজ দুটো অদ্ভুত কায়দাতে হাতের তেলোয় অটল ভাবে বসিয়ে উঠে চলত ফরাশখানা থেকে বৈঠকখানায়। তার পর ড্রপ পড়ত রঙ্গমঞ্চে, এবং নোটো খোড়া, নন্দ ফরাশ দুয়ে মিলে বেহালা বাদন দিয়ে সেদিনের মতো পালা সাঙ্গ হত সন্ধেবেলায়। তখন পিদুমের ধারে বসে রূপকথা শোনা, ইকড়ি মিকড়ি, ঘুটি-খেলার সময় আসত। সেই ঘরের এককোণে বসে রূপকথা বলে একটা দাসী— দাগীটার চেয়ে তার রূপকথাটাকে বেশি মনে পড়ে। এই দাসীটা ছিল আমার ছোটো বোনের। সে বলে তার দাসীর নাম ছিল মঞ্জরী। আর দোয়ারি চাকর এই কবিত্বপূর্ণ মঞ্জর নামটির নাকের ডগাটা বঁটির ঘায়ে উড়িয়ে দিয়েছিল তাও বলে সে ; কিন্তু আমি দেখি মঞ্জরীকে শুধু একটা গড়-পরা নাকভঙি নাম, বসে আছে একটা লাল চামড়ার তোরঙ্গ ঠেস দিয়ে দুই পা ছড়িয়ে । তোরঙ্গটার সকল গায়ে পিতলের পেরেক মালার মতো করে আঁটা । মঞ্জরী ঝিমোচ্ছে আর কথা বলছে : এক ছিল টুনটুনি – সে নিমগাছে বাসা না বেঁধে রাজবাড়ির ছাতের আলসেতে থাকে, আর রাজপুত্তরের তোশক থেকে তুলে চুরি করে করে ছোট একটি বাসা বাধে।" ছাতে ওঠবার সিড়ি বলে একটা কিছু নেই তখনে আমার কাছে, অথচ টুনটুনির বাসার কাছটায়– একেবারে নীল আকাশের গায়ে, ছাতের কার্নিসে উঠে গিয়ে বসি পা ঝুলিয়ে। এমনি দিনের বেলায় রূপকথার সিড়ি ধরে পাখির সঙ্গে পেতেম ছাতের উপরের দিকটা । আবার রোজই নিশুতি রাতে মাথাব উপরে পেতেম শুনতে হুটোপুটি করছে ছাতটা— ভাট গড়গড় গড়াচ্ছে, দুমকুম লাফাচ্ছে । ছাতটা তখন ঠেকত ঠিক একটা অন্ধকার মহায়ণ্য বলে— যেখানে সন্ধেবেলা গাছে গাছে ভোঁদড় করে লাফালাফি, আর আকাশ থেকে জুই ফুল টিকিতে বেঁধে ব্রহ্মদৈত্য থাকে এ-ছাত ও-ছাত পী মেলে দাড়িয়ে ধ্যান করে। এমনি ধরে গল্প-কথার মধ্যে দিয়ে কত কী দেখেছি তখন । যখন চোখও চলে না বেশিদূর, পা-ও হাটে না অনেকখানি, સ્વ ર