পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তখন কান ছিল সহায়। সে এনে পৌঁছে দিত কাছে ছাত, হাতে এনে দিত কমলাফুলির টিয়ে পাখি, চড়িয়ে দিত আগডুম-বাগডুম ঘোড়ায়, লাটসাহেবের পালকিতে এবং নিয়ে যেত মালিপিসির বনের ধারের ঘরটাতে আর মামার বাড়ির দুয়োরেও ! মায়ের অনেকগুলি দাসী ছিল– সৌরভী, মঞ্জরী, কামিনী কত কী তাদের নাম । অনেকদিন অন্তর দেশে যেত এর সব গায়ের মেয়ে— অনেকদিন পরে ফিরত আবার। কখনো বা এরা দল বেঁধে যেত গঙ্গা নাইতে পার্বণে, আর নিয়ে আসত দু’চারটে করে খেলনা, পীরের ঘোড়, সবজে টিয়ে, কাঠের পালকি, মাটির জগন্নাথ, সোনার ময়ুর, আতা গাছে তোতা, টেকি, বঁটি। এমনি নানা রূপকথার দেশের, ছড়ার দেশের পশু, পক্ষী, ফুল, ফল, তৈজসপত্র সবাইকে পেতেম চোখের কাছেই কিন্তু মাসিপিসির ঘর আর মামার বাড়ি দেখা দিয়েও দিত না— বাড়ির ছাতের মতোই অজ্ঞাতবাসে ছিল । মঞ্জরী দাসী এক-একদিন খেয়ালমতো খোলা জানলার ধারে তুলে ধরত আর বলত— ওই স্থার্থ মামার বাড়ি। বাড়ির সন্ধানে উত্তর আকাশ হাতড়াত চোখ, দেখত না একখানিও ইট, শুধু পড়ত চোখে তখন আমাদের বাড়ির উত্তরপশ্চিম কোণে মস্ত তেঁতুল গাছটার শিয়রে মন্দিরের চূড়োর মতো শাদা শাদ মেঘ স্থির হয়ে আছে। ওইটুকু দেখিয়েই দাসী নামিয়ে দিত কোল থেকে খড়খড়ির তলার মেঝেতে । তারপর সে দরজা-জামালা বন্ধ স্তরে দিয়ে রান্নাবাড়িতে ভাত খেতে যেত একটা বগি-থালা সিন্দুকের পাশ থেকে তুলে নিয়ে । প্রায় রাতেরই মতো চুপচাপ আর অন্ধকার হয়ে যেত ঘরখানা দিনেদুপুরে। সবজে খড়খড়িগুলো সোনালি দাড়ি টানা একট-একটা ডুরে-কাপড়ের পর্দার মতো ঝুলত চৌকাঠ থেকে – কাঠের তৈরি বলে মনেই হত না জানলাগুলো ! বাইরের খানিকটা আঁচ পাওয়া যেত খড়খড়ির ফাঁকে ফাকে, স্বতোর সঞ্চারে পৌছত এসে আকাশের দিক থেকে চিলের ডাক। বাতাসের ৪ ডা ক খুব মিহি স্বর দিয়ে কানে আসত— ঝড়ের একটা আবছায় মনে পড়ত— একটা দুটো কোমল টান প্রথমে, তার পর খানিক চড়া স্বর, তার পর বেশ একটা ফাক, তার ঠিক পরেই একটানা তীব্র মুর বাতাসের। এমনি গোট। দুই-ভিন আওয়াজ, আর কিছু নেই যখন তিনতলায়, তখন সেই নিঃসাড়াতে চোখ দুটো দেখতে ૨૭