পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

না। তুমি শুধু নিজের কাজ করে যাবে। তুমি কত টাকা মাসে চাও বলে।’ আমি বললুম, সে আর আমি কী বলব সাহেব, সবই তো তুমি জান, এও তুমিই জানবে। কী দেবে না-দেবে সেও তোমার ইচ্ছ, আমি চাই নে কিছুই । সাহেব বললেন, “আচ্ছা, তোমাকে আমি ভাইস-প্রিন্সিপাল করে দিলাম। তুমি এখন মাসে তিনশো টাকা করে পাবে।” যেতে শুরু করে দিলাম সকাল-সকাল চারটি ভাত খেয়ে। প্রথম দিন গিয়ে তো আপিস-ঘরে ঢুকে মুষড়ে গেলুম—আমি তো আপিসের কাজ বলতে কিছুই জানি না। সাহেব বললেন, ‘কে বলে তোমার ও-সব কাজ করতে হবে ? তার জন্য হেডমাস্টার, হেডক্লার্ক আছে। তারা সব দেখবে আপিসের কাজ। তুমি তোমার কাজ করে যাও। চলে, তোমাকে আর্ট গ্যালারি দেখিয়ে নিয়ে "আসি ।’ আমাকে নিয়ে গেলেন আর্ট গ্যালারি দেখাতে। আমি আর সাহেব চলেছি, আগে-পিছে চাপরাসি মন্ত হাতপাখা নিয়ে হাওয়া করতে করতে যাচ্ছে। বাদশাহি চালে চলেছি বড়োসাহেবের আর্ট গ্যালারি দেখতে । সাহেব চাপরাসিকে বললেন পর্দা সরাতে ৷ ভারি তো আর্ট গ্যালারি, তার আবার পর্দা সরাও—এখন ভাবলে হাসি পায়। দু-তিনখানা মোগল ছবি, আর দু-একথান। পাশিয়ান ছবি, এই খান চার-পাচ ছবি নিয়ে তখন আর্ট গ্যালারি। পর্দা তো সরানো হল । একটি বকপাখির ছবি, ছোটোই ছবিখানা, মন দিয়ে দেখছি, সাহেব পিছনে দাড়িয়ে বুকে হাত দিয়ে। আমাকে বললেন, ‘এই নাও, এটি দিয়ে দেখো।' বলে বুক-পকেট থেকে একটি অতসী কাচ বের করে দিলেন। সেই কাচটি পরে আর আমি হাতছাড়া করি নি। বহুকাল সেটি আমার জামার বুক-পকেটে ঘুরেছে। আমি নন্দলালদের বলতুম, এটি আমার দিব্যচক্ষু। সেই কাচ চোখের কাছে ধরে বকের ছবিটি দেখতে লাগলুম। ওম, কী দেখি ! এ তো সামান্য একটুখানি বকের ছবি নয়, এ যে আস্ত একটি জ্যাস্ত বক এনে বসিয়ে দিয়েছে ! কাচের ভিতর দিয়ে দেখি, তার প্রতিটি পালকে কী কাজ ! পায়ের কাছে কেমন খসখসে চামড়া, ধারালো নখ, তার গায়ে ছোট ছোট পালক—কী দেখি—আমি অবাক হয়ে গেলুম, মুখে কথাটি নেই। পিছনে সাহেব তেমনি ভাবে বুকে হাত দিয়ে দাড়িয়ে, আমার অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন, যেন উনি জানতেন যে আমি এমনি হয়ে যাব এ ছবি দেখে । তারপর আর দু-চারখানা ছবি যা ছিল দেখলুম। সবই ওই একই ব্যাপার। Voeb,