পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তখন কে এল ? তখন প্রভু এলেন তাকে বাচাবার জন্যে। বললেন, সেই দিকে শিকড় পাঠা যেখান থেকে সে চিরদিন রস পাবে, বনবাসের আনন্দ পাবে।” জোড়াগাছের স্মৃতি ঝাপসা হয়ে গেছে, ক্রমেই মিলিয়ে যাচ্ছে। অন্য গাছটিতে পড়েছে অস্তরবির আলে, তাপ দিয়ে বাচাতে চাচ্ছে। সবুজ মরে গিয়ে গৈরিক রঙের শোভা প্রকাশ পেল। সেখানে শুরু হল বনের ইতিহাস । অন্ধকার রাত্রে আর-এক মুর বাজল মনে। বনদেবীদের দেওয়া সেই স্বর। সোনার স্বপ্ন যেন আর-একবার ধরা দেবে-দেবে করলে, যেখানে সোনার হরিণ থাকে। অলকার রঙছুট ময়ূরী এল। সে জগতে সে রঙের অপেক্ষ রাখে না। সেই যে কুঞ্জে নূপুর বাজে সেখানে রঙচুট ময়ূরী থেলা করে। বিরহের গভীর স্বর বাজে। মনময়ূরী একলা । শক্ত পাথরে মন-পাখি বধিছে বাস । রঙছুট ছবি। ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে এল সবুজ রঙ। সেখানে ভোরের পাখি শীতের সকালে গান গেয়ে বলে, ‘বেরিয়ে আয়-ন আমার কাছে, রঙিন জগতে ’ স্মৃতি জাগায় বহুকাল আগের। মন চায় বাড়ি ফিরতে, বোঝ বাধাছাদ। করে। স্বপ্নে দেখে বহুকাল আগের ছেড়ে-আসা বাড়ি খর ঘাট মাঠ গাছ । তার পর সবশেষে প্রকৃতিমাতা দেখা দেন নিশাপরীর মতো । নীল ডানায় ঢাকা আকাশ, ঘরের সন্ধ্যাপ্রদীপ ধরে একটুখানি আলো । এই হল শিল্পীর জীবনের ধারার একটু ইতিহাস। শুধুই উজানভাটির খেলা। উজানের সময় সব-কিছু সংগ্রহ করে চলতে চলতে ভাটার সময়ে ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে দিয়ে যাওয়া। বসন্তে যখন জোয়ার আসে ফুল ফুটিয়ে ভরে দেয় দিক-বিদিক, আবার ভাটার সময়ে তা ঝরিয়ে দিয়ে যায়। আমারও যাবার সময়ে যা দুধারে ছড়িয়ে দিয়ে গেলুম তোমরা তা থেকে দেখতে পাবে, জানতে পাবে, কত ঘাটে ঠেকেছি, কত পথে চলেছি, কী সংগ্রহ করেছি ও সংগ্রহের শেষে নিজে কী বকশিশ পেয়ে গেছি। এতকাল চলার পরে বকশিশ পেলুম আমি তিন রঙের তিন ফোটা মধু।