পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখ বুজে তামাকই টেনে চলেছে। সেই সময় ঢাকা দেওয়া একটা পাখির খাচা হাতে হাজির হত এক বহুরূপী। নানা রকম প্রভাতী পাখির ডাক ডাকতে ডাকতে জানিয়ে দিত— ভোর হয়েছে ‘যাত্রা শেষ। আজকালকার যাত্র-থিয়েটারের মতে ওই ঠ্যানঠেনে ঘড়িঘণ্টার বিরক্তিকর আওয়াজ ছিল নী সেকালের যাত্রায় । যাত্রা শেষ জানিয়ে দেবার জন্যে ঢোলটা একবার বেজে উঠত মাত্র । এদিকে রোঁম্বনচোঁকিতে ‘ভোরাই ধরত। ওই অত ভোরে কিন্তু তখনে অনেক আগন্তুক অসিত, বেশির ভাগ মেয়েরাই, গঙ্গা নেয়ে ঠাকুর দেখতে এসে গলায় কাপড় দিয়ে ঠাকুর প্রণাম করে যেত। আমাদের নিয়ে, রামলাল তখন বাড়িতে ফিরত । কয়লাহাটার মোড়ে গিয়ে গাড়ি ভাড়৷ হত । তখন সেখানে গোরুর গাড়ির ভয়ানক ভীড় ৷ হৈ-চৈ হট্টগোল— গাড়িতে গিয়ে উঠতে বুক ধড়াল ধড়াস করত। এখন তো সেখানে তোমাদের মস্ত রাস্ত বিবেকানন্দ রোড। এর পরে বিজয় । সেইটে ছিল আমাদের খুব আনন্দের দিন। সকাল থেকে খালি কোলাকুলি আর পেন্নাম। আমরা তখন যাকে তাকে পেন্নাম করছি। সেদিনও কিছু কিছু পার্বণী মিলত। আমাদের বুড়ে বুড়ে কর্মচারী র্যারা ছিলেন– যোগেশদাদা প্রভৃতিকে আমরা বিজয়ার দিন পেন্নাম করে কোলাকুলি করতুম। বুড়ে বুড়ে চাকররাও সব এসে আমাদের টিপ, টিপ, করে পেয়াম করত। তখন কিন্তু ভারি লজ্জ করত। খুশিও যে হতুম ন৷ তা নয়। কর্তামশায়কে ( মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ), কর্তাদিদিমাকে, এ-বাড়ির, ওবাড়ির সকলকেই প্রণাম করতে যেতম। বরাবরই আমরা বড়ে হয়েও কর্তামশায়কে প্রতি বছর প্রণাম করতে যেতম। তিনি জড়িয়ে ধরে বলতেন— ‘আজ বুঝি বিজয় । সে কি কম আনন্দ । তার কাছে তো সহজে যাওয়া ঘটত না, তাই। তার পর সন্ধেবেলা হত ‘বিজয় সম্মিলনী’ । আমাদের বাড়িতেই বসত মস্ত জলসা। খাওয়াদাওয়া, মিষ্টমুখ, আতর, পান, গোলাপজলের ছড়াছড়ি। ঝাড়বাতি জলছে। বিটু-ওস্তাদ তানপুরা নিয়ে গানে গানে মাত করে দিতেন। তার গলায় বিজয়ার সেই করুণ গান শুনে মেয়ের চিকের আড়ালে চোখের জল ফেলতেন। কী তার গান— ‘ৰাজুমা লয়ে বার সঙ্গে না প্রাণে। বায় প্রাণ বায় সেই জানে।" Woo)