পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছুখান বড়ে বড়ো অয়েল পেনটিং— সাহেব ওস্তাদের আঁকা— বরবেশে এই বংশেরই এক ছেলে আর পেশওয়াজ পর একটি মেয়ে, দু’জনেই হীরে মানিক আর কিংখাবে মোড় । এই এখন যেমন খোটাদের বর-সাজ তেমনি ধরনের সাজসজ্জা দু’জনেরই। গালিচার উপরে মেহগনি কাঠের বাঘ-থাব, বাঘমুখে অভূত গঠনের কোঁচকেদার তেপায়, একটার মতো অন্তটা নয়। আরামে বসার জন্যেই তৈরি এই-সব কোঁচ কেদারায় সেই সেকালের লাট-বেলাট-সাহেব-সওদাগর ও চৌরঙ্গীর বাসিন্দা— তারা বড়ে বড়ো সটকায় তামাক টানছে, আর ভয়কার নাচ দেখছে গম্ভীর হয়ে বসে । সব সাহেবই পাউডার মাখানে পরচুলধারী। হাতে রুমাল আর নস্তদানি । দু’সারি উপির ছোকরা ক্রমান্বয়ে বড়ে বড়ে পাখার বাতাস দিচ্ছে তাদের, আর মজলিসে রুপোর সালবোটে সোনারুপার তবক-মোড় পান বিলি করে চলেছে। আতরদানি গোলাপ-পাশ ফিরিয়ে চলেছে হরকরা তারা। পাশের একটা খাশকামরা— উত্তর দক্ষিণ ও পুব তিনদিকে খোলা— সেখানে কর্তার সঙ্গে মুরুব্বি সাহেব দু-চারজন বসে। সারি সারি খোলী জানলায় দেখা যায় রাতের আকাশ–যেন কারচোপের বুট দেওয়া নীল পর্দা অনেকগুলো । পুবের ক’টা জানলার ফাকে ফাকে দেখা দেয় খালপারের নারকেল গাছের সারি, তার উপরে চাদ উঠছে— খেন কান-ভাঙা সোনারএকটা আবখোরার টুকরো। পশ্চিমের খোলা জানলায় দেখা যাচ্ছে সেকালের সওদাগরি জাহাজের মাস্তুলগুলো, ঘোষাৰ্ঘেযি ভিড় করে দাড়িয়ে । উত্তরে— সেকালের শহর ও বাড়ির অরণ্য একটা । যে-তিনতলার উপর উত্তর-পশ্চিম থেকে বয় গঙ্গার হাওয়া, পুব দিয়ে আসে বাদলের ঠাণ্ড বাতাস, উত্তর জানলায় শীতের খবর আসে, দক্ষিণ বাতায়নে রহে-রহে বয় সমুদ্রের হাওয়া, সেখানটাতে একটা রাত নয়— আরব্য উপন্যাসের অনেকগুলো রাতের মজলিসের আলো, সারিসারি খোলা জানলা হয়ে বাইরে রাতের গায়ে ফেলত একটার পর একটা সোনালি আভার - সোজা টান। আর সমস্ত তিনতলাটা দেখাত যেন মস্ত একটা নৌকা অনেকগুলো সোনার দাড় কালে জলে ফেলে প্রতীক্ষা করছে বন্দর ছেড়ে বার হবার হুকুম-ও ঘণ্টা। এ যারা তখন আশেপাশের বাড়ির ছাতে wo