পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লকালের ঘড়ি– ঘুম ভাঙাবার জন্তে, সাতটার ঘড়ি উপাসনার জন্তে, সাড়ে সাত হল মাস্টার আসার, পড়তে যাবার ঘড়ি । দশ, স্নানাহারের ; সাড়ে দশ, ইস্কুল ও আপিলের ; চার, ৰৈকালিক জলযোগের, কাজকর্ম ও কাছারি বন্ধের ; পাচ, হাওয়া খেতে যাবার। ঘুমোতে যাবার ঘণ্টা একট, দশটা কি ন’টায় বোধহয় বাজত না— কেননা তখন ঠিক ন’টা রাত্রে কেল্লা থেকে তোপ দাগ হত আর আমাদের বৈঠকখানায় ঈশ্বরদাদা বোম্কালী’ বলে এক হুংকার দিতেন, তাতেই পেট-ঘড়ির কাজ হয়ে যেত। বেলা একটার তোপ পড়লেই করকর স্বরশ্বর ঘড়ির চাবি ঘোরার ধুম পড়ত বাড়িতে, ও-সময়টাতেও পেট-ঘড়ির দরকারই হত না । এই ঘড়ির হুকুমে দেখি বাড়ির গাড়ি-ঘোড়া চাকর-বাকর ছেলেমেয়ে সবাই চলে, হাড়ি চড়ে হাড়ি নামে, মাস্টারমশাই বই খোলেন বই বন্ধ করেন । ও-বাড়ির এই পেট-ঘড়িটাকে এক-একদিন দেখতে চলতেম। পুরোনো বাড়ির উঠানের দাওয়ায় উঠতে বা-ধারে একটা খিলেনের মাঝে ঝোলানো থাকত ঘড়িটা। দেখতেম শোভারাম জমাদার সেখানটাতে বসে ময়দা ঠাসছে— চকচকে একটা লোটা হাতের কাছেই রয়েছে, থেকে থেকে সেটা থেকে জল নিয়ে ময়দার চুটিগুলো ভিজিয়ে দিচ্ছে আর দু'হাতের চাপড়ে একএকখান মোট রুটি ফসফল গড়ে ফেলছে। বেশ কাজ চলছে, এমন সময় শোভারাম হঠাৎ রুটি-গড়া রেখে, ঘড়িটাকে মস্ত একটা কাঠের হাতুড়ি দিয়ে ঘা কয়েক পিটুনি কশিয়ে কাজে বসে গেল। দেখে দেখে আমার ইচ্ছে হত রুটি গড়তে লেগে যাই ; আবার তখনই ঘড়িটা বাজিয়ে নেবার লোভ জন্মাত । হাতুড়িটায় হাত দেওয়া মাত্র জমাদারজী ধমকে উঠত— নেহি, কর্তা মহারাজ খাপ পা হোয়েঙ্গ ! কর্তা মহারাজ, কে তিনি, জানবার ভারি ইচ্ছে হত। তখন কর্তাদাদামশায় দোতলার বৈঠকখানায় থাকেন, তার ঘরের দরজায় কিন্তুসিং হরকরা– উদি পরে বুকে ওয়ার্কল উইল উইন আর হাতির পিঠে নিশেন চড়ানো তকম ঝুলিয়ে, মোট রুপোর সেটি হাতে টুলে বসে পাহার দেয়, হাতে একটা পেনসিল-কাট ছুরি, কর্তাকে সহজে দেখার উপায় নেই। দেখতেম কর্তা পাহাড় থেকে ফিরে যে ক'দিন বাড়িতে আছেন সে ক'দিন সব যেন চুপচাপ। দরোয়ান হারুয়, হাক্ষর বলে হাকডাক করতে সাহস ৩৭