পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেতের চোঁকিতে বসতেন। চৌকিখানা আসত তার সঙ্গে সঙ্গেই আবার সরেও যেত তাঁর সঙ্গেই। আমার প্রায়ই অসুখ ছিল না, কাজেই ডাক্তারের লাঠিটার বাঘমুখ কেমন করে কাত হয়ে চাইছে সেইটেই দেখতে পেতেম। ছোটো ছোটে লাল মানিকের চোখ দুটো বাঘের— ইচ্ছে হত খুঁটে নিই, কিন্তু ভয় হত— মা আছেন কাছেই দাড়িয়ে ডাক্তারের। এখনকার কালে কত ওষুধেরই নাম লেখে একটু অমুখেই, তখন সাতদিন জর চলল তে দালচিনির আরক দেওয়া মিকশ্চার আসত— বেশ লাগত খেতে, আর খেলেই জর পালাত। তিনদিন পর্যন্ত ওষুধ লেখাই হত না কোনো— হয় সাবুদ্ধান, নয় এলাচদানা, বড়ো জোর কিটিং-এর বনবন। তিনদিনের পরেও যদি উঠে না দাড়াতেম তবে আসত ডাক্তারখানা থেকে রেড মিকশ্চার। গলদা চিংড়ির ঘি বলে সেটাকে সমস্তটা খাইয়ে দিতে কষ্ট পেতে হত মাকে। এখন নানা রকম শৌখিন ওষুধ বেরিয়েছে, তখন মাত্র একটি ছিল শৌখিন ওষুধ, যেটা খাওয়া চলত অমুখ না থাকলেও। এই জিনিসটি দেখতে ছিল ঠিক যেন মানিকে গড় একটি একটি রুহীতনের টেক্কা । নামটাও তার মজার— জুজুর্বল। এখন বাজারে সে জুজুবল পাওয়া যায় না, তার বদলে ডাক্তারখানায় রাখে যষ্টিমধুর জুজুবিস– খেতে অত্যন্ত বিস্বাদ । অমুখ হলে তখন ডাক্তারের বিশেয ফরমাসে আসত এক টিন বিস্কুট আর দমদম মিছরি। এখনকার বিষ্ণুটগুলো দেখতে হয় টাকা, নয় টিকিট। তখন ছিল তারা সব কোনোটা ফুলের মতে, কেউ নক্ষত্রের মতো, কতক পাখির মতে । দমদম মিছরিগুলো যেন সোনার থেকে নিঙড়ে নেওয়া, রসে ঢালাই করা মোটা স্কু একটা-একটা । ডাক্তারের পরই– ঠনঠনের চটি পায়ে, সভ্যভব্য চন্দ্র কবিরাজ— তিনি তোশাখানা থেকে দপ্তরখানা হয়ে, লাল রঙের বগলী থেকে চটি বিলি করে করে উঠে আসতেন তেতলায় আমাদের কাছে। নাড়ি টিপে বেড়ানোই ছিল র্তার একমাত্র কাজ, কিন্তু নিত্য-কাজ। বুড়ে কবিরাজ আমার মাকে মা বলে যে কেন ডাকে তার কারণ খুজে পেতেম না । আর একটি-দুটি লোক আগত উপরের ঘরে, তাদের একজন গোবিন্দ পাগু, আর একজন রাজকিষ্ট মিস্ত্রি। পাণ্ড আসত কামানো মাথায় নামাবলি জড়িয়ে, কপূরের মালা, জগন্নাথের প্রসাদ নিয়ে। দাসীদের সঙ্গে আমরাও ●br