পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘিরে বসতেম তাকে। প্রথমটা সে মেঝেতে খড়ি পেতে গুনে দিত দাসীদের মধ্যে কার কপালে ক্ষেত্তরে যাওয়া আছে, না-আছে। তার পর প্রসাদ বিতরণ করে সে শ্রীক্ষেত্রের গল্প করতে থাকত পট দেখিয়ে । সেই পট, নামাবলি, কপুরের মালা সব ক’টার রঙ মিলে শ্রীক্ষেত্রের সমুদ্র বালি পাথর ইত্যাদির একটা রঙ ধরেছিল মনটা । অল্প কয় বছর হল যখন পুরী দেখলেম প্রথম, তখন সেই-সব রঙগুলোকেই দেখতে পেলেম, যেন অনেক কাল আগে দেখা রঙ । নৌকো, পালকি, মন্দির, বালি, কাপড়– সমস্ত জিনিস শাদা, হলুদ, কালো ও নীল— চারটি বহুকালের চেন রঙের ছোপ ধরিয়ে রেখেছে ! আর-একজন সাহেব অসিত, তাঁর নাম রুবারীয়ে। জাতে পর্তুগীজ ফিরিঙ্গী— মিশকালে । বড়োদিনের দিন সে একটা কেক নিয়ে হাজির হত । তাকে দেখলেই শুধোতেম— ‘সাহেব আজ তোমাদের কি ? সাহেব আমনি নাচতে নাচতে উত্তর দিত, ‘আজ আমাদের কিসমিস।' সাহেবের নাচন দেখে আমরাও তাকে ঘিরে খুব একচোট নেচে নিতেম। নতুন কিছু পাখি কিম্বা নিলেমে গাছ কেনার দরকার হলে, বৈকুণ্ঠবাবুর ডাক পড়ত। দেখতে বেঁটে-খাটো মানুষটি, মাথায় টাক ; রাজ্যের পাধি, গাছ আর নিলেমের জিনিসের সংগ্রহ করতে ওস্তাদ ছিলেন ইনি। তখন স্তার রিচার্ড টেম্পল ছোটোলাট— ভারি তার গাছের বাতিক। বৈকুণ্ঠবাৰু নিলেমে ছোটোলাটের ডাকের উপর ভাক চড়িয়ে, অনেক টাকার একটা গাছ আমাদের গাছ-ঘরে এনে হাজির করলেন। ছোটোলাট খবর পেলেন— গাছ চলে গেছে জোড়াসাকোর ঠাকুরবাড়িতে । সঙ্গে সঙ্গে লাটের চাপরাশি পত্র নিয়ে হাজির— ছোটোলটি বাগান দেখতে ইচ্ছে করেছেন। উপায় কী, সাজসাজ রবে পড়ে গেল । আমার মখমলের কোট-প্যান্ট আবার সিন্দুক থেকে বার হল । সেজে-গুজে বারান্দায় দাড়িয়ে দেখলেম— ঘোড়ায় চড়ে ছোটোলাট এলেন। খানিক বাগানে ঘুরে একপাত্র চ খেয়ে বিদায় হলেন । বৈকুণ্ঠবাবুর ডেকে-আন গাছটাও চলে গেল জোড়াসাকো থেকে বেলভেডিয়ার পার্কে । বৈকুণ্ঠবাবুর বাস ছিল পাথুরেঘাটায়, সেখান থেকে নিত্য হাজিরি দেওয়া চাই এখানে। একবার ঘোর বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে এক-কোমর জল দাড়িয়ে যায়। বৈকুণ্ঠবাবু গলির মোড়ে আটকা— অন্তের যেখানে হাটু-জল 9a W S18