পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসমাপিক উড়ো ভাষায় এসে গেল হাতে-খড়ির খবরটা আমার কানে । কিন্তু রামলাল রেখেছিল পাক্কা খবর, ঠিক কখন কেন তারিখে কোন মাসে হবে হাতেখড়িটা । কেননা এই শুভকাজে তার কিছু পাওনা ছিল। কাজেই সে ঠিক সময় বুঝে, রাত ন’টার আগেই আমাকে খাচার মধ্যে বন্ধ করে বললে, ‘ঘুমিয়ে নাও, সকালে হাতে-খড়ি, ভোরে ওঠা চাই।' দু’কানের মধ্যে দুটো কথা— ‘ভোরে ওঠা, হাতে-খড়ি’ – থেকে থেকে মশার মতো বাঁশি বাজিয়ে চলল। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম আসতে দেরি করে দিয়ে, ঠিক ভোরে আমাকে একটু ঘুমোতে দিয়ে পালাল কথা দুটো। পাছে হাতে-খড়ির শুভলগ্নটা উতরে যায়, রামলালের চেয়েও সজাগ ছিল আমাদের ঠাকুরঘরের বামুন ! সে ঠিক আজকের একজন স্টেশনমাস্টারের মতো দিলে ফাস্ট বেল। রামলালও বলে উঠল— ‘চলে, আর দেরি নেই।’ পাছে দেরি হয়ে পড়ে, সেজন্যে পা চালিয়ে চলল রামলাল। একতলায় তোশাখান থেকে মান গলি-যুঁজি সিড়ি উঠোন পেরিয়ে চলতে চলতে দেখছি কাঠের গরাদে-আঁটা একটা জানলা-– সেই জানলার ওপারে অন্ধকার ঘরের মধ্যে কালো একটা মূর্তি একটা মোট জাল থেকে কী তুলছে। লোকের শব্দ পেয়ে সে মূর্তিটা গোল দুটাে চোখ নিয়ে আমার দিকে দেখতে থাকল। এর অনেক কাল পরে জেনেছিলেম এ-লোকটা আমাদের কালীভাণ্ডারী— রোজ এর হাতের রুটিই খাওয়ায় রামলাল। কালী লোকটা ছিল ভালো, কিন্তু চেহারা ছিল ভীষণ । আলিবাবার গল্পের তেলের কুপে আর ডাকাতের কথা পড়ি আর মনে পড়ে এখনো কালীর সেদিনের চোখ, গরাদেআঁট ঘর আর মেটে জাল। ভাড়ার ঘর পেরিয়ে এক ছোটে উঠোন— জলেধোওয়া, লাল টালি বিছানে। সেখান থেকে ছাতের-ঘরের ঠাকুরঘরের উত্তর দেওয়াল দেখা যায়, কিন্তু সেখানে পৌঁছতে সহজে পারি নি। উঠোনের উত্তর-ধারে চার-পাচটা সিড়ি উঠে একটা ঘর-জোড়া মেটে সিড়ি সোজ৷ দোতলায় উঠেছে। এই সিড়ির গায়েই পালকি নামবার ঘর। সেটা ছাড়িয়ে C X