পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গায়ে তিন রঙের ছাপ— মোটা ল্যাঙ্গ তুলে বুড়ির গা ঘেষে গিয়ে বলে মিয়া । বুড়ে ভিখিরী অমনি হাতের লাঠিটা কে দেয়। বেড়াল দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরতলায় উঠে আসে ! ঠিক এই সময় শুনি, ঠাকুরঘরে ভোগের ঘণ্টা শাখ বেজে ওঠে। অমনি দেখি বুড়ে বুড়ি দুটোতে চলে গেল— ঠিক যেন নেপথ্যে প্রস্থান হল তাদের থিয়েটারে। কুলুঙ্গিতে বসে আমি শুনতে থাকলেম কাসর বাজছে— তার পর -- তার পর--- তার পর••• একদিন সকালে আমাদের দক্ষিণের বারান্দার সামনে লস্ব ঘরে চায়ের মজলিস বসেছে। পেয়ারী-বাৰুচি উদি পরে ফিটফাট হয়ে সকাল থেকে দোতলায় হাজির ৷ আমার সেই নীল মখমলের সেকেণ্ড-হ্যাও কোট আর শর্ট প্যান্টটার মধ্যে পুরে রামলাল আমাকে ছেড়ে দিয়েছে— যতটা পারে চায়ের মজলিস থেকে দূরে। কে জানে সে কে একজন – মনে তার চেহারাও নেই, নামও নেই— সাহেব-হবে গোছের মানুষ, চ খেতে খেতে হঠাৎ আমাকে কাছে যেতে ইশারা করলেন। চায়ের ঘরে ঢুকতে মানা ছিল পূর্বে। কাজেই, আমি ধরা পড়েছি দেখে পালাবার মতলবে আছি, এমন সময় রামলাল কানের কাছে চুপি চুপি বললে, “যাও ডাকছেন, কিন্তু দেখো, খেয়ে না কিছু।” সাহস পেলেম, লোজা চলে গেলেম টেবিলের কাছে, যেখানে রুটি বিস্কুট, চায়ের পেয়ালা, কাচের প্লেট, তথম-ঝৈালানো বাবুচি, আগে থেকে মনকে টানছিল। ভুলে গেছি তখন রামলালের হুকুমের শেষ ভাগটা । ঘরের মধ্যে কী ঘটল তা একটুও মনে নেই। মিনিট কতক পরে একখানা মাখন-মাখানো পাউরুটি চিবোতে চিবোতে বেরিয়ে আসতেই আড়ালে কেদারদাদার সামনে পড়লেম । ছেলেমাত্রকে কেদারদাদার অভ্যাস ছিল ‘শালা’ বলা । তিনি আমার কানটা মলে দিয়ে ফিসফিস করে বললেন– “যাঃ, শালা, ব্যাপটাইজ হয়ে গেলি।” রামলাল একবার কটমট করে আমার দিকে চেয়ে বললে— বলেছিলুম না, খেয়ে না কিছু।” কী যে অন্যায় হয়ে গেছে তা বুঝতে পারি নে ; কেউ স্পষ্ট করেও কিছু বলে না। দাসীদের কাছে গেলে বলে— ‘মাগো, খেলে কী করে ? ছোটো বোনের বলে বসে— ‘তুমি খেয়েছ, ছোব না ’ বড়োপিসি মাকে ধমকে বলেন— ‘ওকে শিখিয়ে দিতে পায় নি, ছোটোবউ। ●●