পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড.djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসত-বাড়ি মামুষের সঙ্গ পেয়ে বেঁচে থাকে বসত-বাড়িটা। যতক্ষণ মানুষ আছে বাড়িতে, ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমানের ধারা বইয়ে ততক্ষণ চলেছে বাড়ি হাব-ভাব চেহারা ও ইতিহাস ৰদলে বদলে। কালে কালে স্মৃতিতে ভরে, বাড়ি-স্মৃতির মাঝে বেঁচে থাকে বাড়ির সমস্তটা । বাড়ি ঘর জিনিসপত্র সবই স্মৃতির গ্রন্থি দিয়ে বাধা থাকে একালের সঙ্গে। এইভাবে চলতে চলতে, একদিন যখন মানুষ ছেড়ে যায় একেবারে বাড়ি, স্মৃতির সূত্রজাল উর্ণার মতো উড়ে যায় বাতাসে ; তখন মরে বাড়িটা যথার্থভাবে। প্রত্নতত্ত্বের কোঠায় পড়ে জানায় শুধু, সেটা দেশী ছাদের না বিদেশী ছাদের, মোগল ছাদের না বৌদ্ধ ছাদের । তার পর একদিন আসে কবি, আসে আর্টস্ট । বাচিয়ে তোলে মরা ইট কাঠ পাথর এবং ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্বের মুর্দাখানার নম্বর-ওয়ারি করে ধরা জিনিসপত্রগুলোকেও তারা নতুন প্রাণ দিয়ে দেয়। সঙ্গ পাচ্ছে মানুষের, তবে বেঁচে উঠেছে ঘর বাড়ি সবই। আমি বেঁচে আছি পুরোনোর সঙ্গে নতুন হতে হতে ; তেমনি বেঁচে আছে এই তিনতলা বাড়িটাও, আজ যার মধ্যে বাসা নিয়ে বসে আছি আমি । আজ যদি কোনো মারোয়াড়ী দোকানদার পয়সার জোরে দখল করে এ-বাড়িট, তবে এ-বাড়ির সেকাল-একাল দুই-ই লোপ পেয়ে যাবে নিশ্চয় । ষে আসবে, তার সেকাল নয় শুধু একালটাই নিয়ে সে বসবে এখানে । দক্ষিণের বাগান ফুয়ে উড়িয়ে ওখানে বসাবে বাজার, জুতোর দোকান, দ্বি-ময়দার আড়ৎ ও নানা— যাকে বলে প্রফিটেবল— কারখানা, তাই বসিয়ে দেবে এখানে। সেকাল তখন স্মৃতিতেও থাকবে না । স্মৃতির স্বত্র নদীধারার মতে চিরদিন চলে মা, ফুরোয় এক সময়। এই বাড়িরই ছেলেমেয়ে— তাদের কাছে আমাদের সেকালের স্মৃতি নেই বললেই হয়। আমার মধ্যে দিয়ে সেই স্মৃতি— ছবিতে, লেখাতে, গল্পে— যদি কোনো গতিকে তারা পেল তো বর্তে রইল সেকাল বর্তমানেও । না হলে, পুরোনো ঝুলের মতে, হাওয়ায় উড়ে গেল একদিন হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে ।