পাতা:অবরোধ বাসিনী.pdf/২৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

অবরোধ বাসিনী - ৪৪

[৪৪]

জনাব শরফদ্দীন আহমদ বি· এ· (আলীগড়) আজিমাবাদী নিন্মলিখিত ঘটনাত্রয় কোন উর্দ্দু কাগজে লিখিয়াছেন। আমি তাহা অনুবাদ করিবার লোভ সম্বরণ করিতে পারিলাম না। যথাঃ

গত বৎসর পর্য্যন্ত আমি আলীগড়ে ছিলাম। যেহেতু সেখানকার ষ্টেশন একরূপ জাঁকজমকে ই· আই· আর· লাইনে অদ্বিতীয় বোধ হয়, সেই জন্য আমি প্রত্যহই পদব্রজে ভ্রমণের সময় ষ্টেশনে যাইতাম। সেখানে অন্যান্য তামাসার মধ্যে অনেকগুলি ১৩শ শতাব্দীর বোরকা আমার দৃষ্টিগোচর হইয়াছিল। আর খোদা মিথ্যা না বলান, প্রত্যেক বোরকাই কোন না কোন প্রকার কৌতুকাবহ ছিল। তন্মধ্যে মাত্র তিনটী ঘটনা এখানে বিবৃত হইল।

প্রথম ঘটনা এই যে, একদিন আমি আলীগড় ষ্টেশনে প্লাট-ফরমে পায়চারি করিতেছিলাম, সহসা পশ্চাৎদিক হইতে আমার গায়ে ধাক্কা লাগিল। মুখ ফিরাইয়া দেখিলাম যে, এক বোরকাধারিণী বিবি দাঁড়াইয়া আছেন; আর আমাকে শাসাইয়া বলিতে লাগিলেন, “মিয়া দেখে চলেন না?” তাঁহার কথায় আমার প্রবল হাসি পাইল, কারণ তিনি ত আমার পশ্চাতে ছিলেন, সুতরাং দেখিয়া চলা না চলার দায়িত্ব কাহার, তাহা সহজেই অনুমেয়। আমি তাঁহাকে কেবল এইটুকু বলিলাম, “আপনি মেহেরবাণী করিয়া বোরকার জাল চক্ষের সম্মুখে ঠিক করিয়া নিন” এবং হাসিতে হাসিতে অন্যত্র চলিলাম।


অবরোধ বাসিনী - ৪৫

[৪৫]

দ্বিতীয় ঘটনা এই যে, একদিন আবার আমি কতিপয় বন্ধুর সহিত আলীগড় ষ্টেশনে তামাসা দেখায় মশগুল ছিলাম। এমন সময় আমাদের সন্নিকটে একটি শিশুর কান্নার শব্দ শুনিতে পাইলাম। আমরা চারিদিকে চাহিয়া দেখিলাম-কিছুই দেখিতে পাইলাম না। আবার কিছুণ পরে শুনিলাম, কোন শিশু আমাদের অতি নিকটে চেঁচাইতেছে, কিন্তু এদিক সেদিক দেখিয়া কিছুই ঠিক করিতে পারিলাম না। আমার বন্ধুরা কিছু বুঝিতে পারিলেন না; কিন্তু যেহেতু বোরকা সম্বন্ধে আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে, তাই আমি অনুসন্ধানে প্রবৃত হইলাম। শেষে দেখি কি, এক বোরকাধারিণী বিবি যাইতেছেন, তাঁহারই বোরকা ভিতর হইতে শিশুর রোদনের শব্দ আসিতেছে!

ঘটনা ছিল এই যে বিবি সাহেবা শিশুকে বোরকা ভিতর লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন; সে গরমে অস্থির হইয়া চীৎকার করিতেছিল! তাই কেহ শিশুকে দেখিতে পায় নাই, কেবল কান্না শুনিতে পাওয়া যাইতেছিল। আমি বন্ধুদের ঐ তামাসা দেখাইয়া দিলাম। আর হাসিতে হাসিতে আমাদের যে কি দশা হইল, তাহা আর কি বলিব?


অবরোধ বাসিনী - ৪৬

[৪৬]

আমি পূর্ব্বের ন্যায় আবার একদা আলীগড় ষ্টেশনের প্ল্যাটফরমে পায়চারি করিতেছিলাম। সম্মুখে এক “সফেদ গোল” (শাদা দল) আসিতে দেখিলাম। নিকটে আসিলে দেখিলাম আগে আগে এক প্রবীণ ভদ্রলোক এক হাতে পানদান অপর হাতে পাখা লইয়া আসিতেছেন; তাঁহার পশ্চাতে কয়েকটী বোরকাধারিণী পরস্পরে জড়াজড়ি করিয়া মিলিত হইয়া আসিতেছেন। এই কাফেলাটী অধিক দূরে না যাইতেই এক মাল-ঠেলা গাড়ীর সম্মুখীন হইল। উহার সহিত টক্কর খাইয়া এক বিবি যেই পড়িলেন, অমনি সমস্ত পার্টি তাঁহার সহিত গড়াইল।