পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভিড় জমিয়া উঠিল, কেহই অস্বীকার করিল না যে বিনা অনুমতিতে রাসিকের গাছ কাটিতে যাওয়াটা ভাল হয় নাই। তাহারাই আবার দরোয়ানজীর হাতে-পায়ে পড়িতে লাগিল, তিনি অনুগ্রহ করিয়া যেন একটা হুকুম দেন। কারণ, অসুখের সময় যে-কেহ দেখিতে আসিয়াছে কাঙালীর মা তাহারই হাতে ধরিয়া তাহার শেষ অভিলাষ ব্যক্তি করিয়া গেছে ! দরোয়ান ভুলিবার পাত্র নহে, সে হাত মুখ নাড়িয়া জানাইল, এ, সকল চালাকি তাহার কাছে খাটিবে না । জমিদার স্থানীয় লোক নহেন ; গ্রামে তঁহার একটা কাছারি আছে, গোমস্ত অধর রায় তাহার কর্তা। লোকগুলো যখন হিন্দুস্থানীটার কাছে ব্যর্থ অনুনয় বিনয় করিতে লাগিল কাঙালী উধ্বশ্বাসে দৌড়িয়া একেবারে কাছারি বাড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল। সে লোকের মুখে মুখে শুনিয়াছিল। পিয়াদার ঘুষ লয়, তাহার নিশ্চয় বিশ্বাস হইল অতবড় অসংগত অত্যাচারের কথা যদি কর্তার গোচর করিতে পারে ত ইহার প্রতিবিধান না হইয়াই পারে না । হায় রে অনভিজ্ঞ ! বাঙলাদেশের জমিদার ও তাহার কর্মচারীকে সে চিনিত না। সদ্যমাতৃহীন বালক, শোকে ও উত্তেজনায় উদভ্রান্ত হইয়া একেবারে উপরে উঠিয়া আসিয়াছিলেন বিস্মিত ও ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, কে রে ? আমি কাঙালী । দরোয়ানজী আমার বাবাকে মেরেছে । বেশ করেচে। হারামজাদা খাজনা দেয়নি বুঝি ? কাঙালী কহিল, না বাবু মশায়, বাবা গাছ কাটতেছিল, আমার মা মরোচে । বলিতে বলিতে সে কান্না আর চাপিতে পারিল না । সকালবেলা এই কান্নাকাটিতে অধর অত্যন্ত বিরক্ত হইলেন । ছোড়াটা মড়া ছুইয়া আসিয়াছে, কি জানি এখানকার কিছু ছুইয়া ফেলিল, নাকি ! ধমক দিয়া বলিলেন, মা মা রেচে। ত যা নীচে নেবে দাড়া ; ওরে কে আছিস রে এখানে একটু গোবরাজল ছড়িয়ে দে। কি জাতের ছেলে তুই ?