পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাড়ে-পািনর আনার অংশীদার শিবচরণের হঠাৎ পস্ত্রীবিয়োগ ঘটলে বন্ধুরা কহিলেন, চল্লিশ-একচল্লিশ কি আবার একটা বয়স ! তুমি আবার বিবাহ কর । শত্রুপক্ষীয়রা শুনিয়া হাসিল, কহিল, চল্লিশ ত শিবচরণের চল্লিশ বছর আগে পার হয়ে গেছে ! অর্থাৎ, কোনটাই সত্য নয় । আসল কথা, বড়বাবুর দিব্য গৌরবর্ণ নাদুস-নুদুস দেহ, সুপুষ্ট মুখের পরে রোমের চিহ্নমাত্র নাই। যথাকালে দাড়িগোফ না গজানোর সুবিধা হয়ত কিছু আছে, কিন্তু অসুবিধাও বিস্তর । বয়স আন্দাজ করা ব্যাপারে যাহারা নীচের দিকে যাইতে চাহে না, উপরের দিকে তাহারা যে অঙ্কের কোন কোঠায় গিয়া ভর দিয়া দাড়াইবে, তাহা নিজেরাই ঠাহর করিতে পারে না । সে যাই হউক, অর্থশালী পুরুষের যে কোন দেশেই বয়সের অজুহাতে বিবাহ আটকায় না, বাঙলাদেশে তি নয়-ই । মাস দেড়েক শোকতাপও না না করিয়া গেল, তাহার পরে হরীলক্ষ্মীকে বিবাহ করিয়া শিবচরণ বাড়ি আনিলেন । শূন্যগৃহ একদিনেই যোলকলায় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। কারণ, শত্রুপক্ষ যাহাঁই কেন না বলুক, প্রজাপতুি যে সত্যিই তাহার প্রতি এবার অতিশয় গপ্রসন্ন ছিলেন, তাহা মানিতেই হইবে । তাহারা গোপনে বলাবলি করিল, পাত্রের তুলনায় নববধূ বয়সের দিক দিয়া একেবারেই যে বেমানান হয় নাই, তবে দুই একটি ছেলেমেয়ে সঙ্গে লইয়া ঘরে ঢুকিলে আর খুত ধরিবার কিছু থাকিতে না ! তবে সে যে সুন্দরী, এ কথা তাহারা স্বীকার করিল। ফল কথা সচরাচর বড় বয়সের চেয়েও লক্ষ্মীর বয়সটা কিছু বেশী হইয়া গিয়াছিল, বোধ করি, উনিশের কম হইবে না । তাহার পিতা আধুনিক নবাতন্ত্রের লোক, যত্ন করিয়া মেয়েকে বেশী বয়স পর্যন্ত শিক্ষা দিয়া ম্যাট্রিক পাশ করাইয়াছিলেন । তাহার অন্য ইচ্ছা ছিল, শুধু ব্যবসা ফেল পড়িয়া আকষ্মিক দারিদ্রের জন্যই এই সুপাত্রে কন্য। অৰ্পণ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন । লক্ষ্মী শহরের মেযে, স্বামীকে দুই-চারিদিনেই চিনিয়া ফেলিল । , > &ප්