পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত সে ভুলিয়া গেল। এতদিন গ্রাম ক্টেটাইয়া কত বেী-ঝি যে আসিয়াছে, তাহার সংখ্যা নাই, কিন্তু পাশেব বাড়ির দরিদ্র ঘরের এই বধূর সহিত তাহদের তুলনাই হয় না। তাহারা যাচিয়া আসিয়াছে, উঠিতে চাহে না । আর বসিতে বলিলে ত কথাই নাই । সে কত প্রগলভ্যতা, কত বাচালতা, মনোরঞ্জন করিবার কত কি লজ্জাকর প্রয়াস। ভারাক্রান্ত মন তাহার মাঝে মাঝে বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছে কিন্তু ইহাদেরই মধ্য হইতে অকস্মাৎ কে আসিয়া তাহার রোগশয্যায় মুহুর্ত-কয়েকের তরে নিজের পরিচয় দিয়া গেল। তাহার বাপের রাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করিবার সময় হয় নাই, কিন্তু প্রশ্ন না। করিবার সময় হয় নাই, কিন্তু প্রশ্ন না করিয়াও লক্ষ্মী কি জানি কেমন করিয়া অনুভব করিল-তাহার মত সে কিছুতেই কলিকাতার মেয়ে নয় ; পল্লীঅঞ্চলে লেখাপড়া জানে বলিয়া বিপিনের স্ত্রীর একটা খ্যাতি আছে । লক্ষ্মী ভাবিল, খুব সম্ভব বীেটি সুর করিয়া রামায়ণ মহাভারত পড়িতে পারে, কিন্তু তাহার বেশী নহে । যে পিতা বিপিনের মত দীনদুঃখীর হাতে মেয়ে দিয়াছে, সে কিছু আর মাষ্টার রাখিয়া স্কুলে পড়াইয়া পাস করাইয়া কন্যা সম্প্রদান করে নাই। উজ্জল শ্যাম-ফরসা বলা চলে না । কিন্তু রূপের কথা ছাড়িয়া দিয়াও, শিক্ষা, সংসৰ্গ, অবস্থা কিছুতেই ত বিপিনের স্ত্রী তাহার কাছে দাড়াইতে পারে না । কিন্তু একটা ব্যাপারে লক্ষ্মীর নিজেকে যেন ছোট মনে হইল। তাহার কণ্ঠস্বর । সে যেন গানের মত, আর বলিবার ধরনটি একেবারে মধু দিয়া ভরা । এতটুকু জড়িমা নাই, কথাগুলি যেন সে বাড়ি হইতে কণ্ঠস্থ করিয়া আসিয়াছিল, এমনই সহজ । কিন্তু সবচেয়ে যে বস্তু তাহাকে বেশী বিদ্ধ করিল, সে ওই মেয়েটির দূরত্ব। সে যে দরিদ্র-ঘরের বধূ তাহা মুখে না বলিয়াও এমন করিয়াই প্রকাশ করিল, যেন ইহাই তাহার স্বাভাবিক, যেন এ ছাড়া আর কিছু তাহাকে কোনমতেই মানাইত না । দরিদ্র, কিন্তু কাঙ্গাল নয়। এক পরিবারের বধু একজনের পীড়ায় আর একজন তাহার তত্ত্ব লাইতে আসিয়াছে, ইহার অতিরিক্ত লেশমাত্রও অন্য Σ δο