পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধূলা লইল। আসিল না। শুধু বিপিনের স্ত্রী। সে যে আসিবে না, হরিলক্ষ্মী তাহা জানিত । এই একটা বছরের মধ্যে তাহারা কেমন আছে, যে-সকল ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলা তাহদের বিরুদ্ধে চলিতেছিল, তাহার ফল কি হইয়াছে, এ-সব কোন সংবাদই সে কাহারও কাছে জানিবার চেষ্টা করে নাই। শিবচরণ। কখনও বাটীতে, কখনও বা পশ্চিমে স্ত্রীর কাছে গিয়া বাস করিতেছিলেন । যখনই দেখা হইয়াছে, সৰ্বাগ্রে ইহাদের কথাই তাহার মনে হইয়াছে ; অথচ একটা দিনের জন্য স্বামীকে প্রশ্ন করে নাই। প্রশ্ন করিতে তাহান্দ্র যেন ভয় করিতে । মনে করিত, এতদিনে হয়ত যা হউক একটা বোঝাপড়া হইয়া মিয়াছে, হয়ত ক্রোধের সে প্রখরতা আর নাই-জিজ্ঞাসাবাদের দ্বারা পাছে আবার সেই পূর্ব্বক্ষত বাড়িয়া উঠে, এ আশঙ্কায় সে এমনই একটা ভাব ধারণ করিয়া থাকি ত, যেন সে সকল তুচ্ছ কথা। আর তাহার মনেই নাই। ওদিকে শিবচরণও নিজে হইতে কোনদিন বিপিনদের বিষয় আলোচনা করিত না । সে যে স্ত্রীর অপমানের ব্যাপার বিস্মৃতি হয় নাই, বরঞ্চ তাহার অবর্তমানে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছে, এই কথাটা সে হরিলক্ষ্মীর কাছে গোপন করিয়াই রাখিত । তাহার সাধ ছিল, লক্ষ্মী গৃহে ফিরিয়া নিজের চোখেই সমস্ত দেখিতে পাইয়া আনন্দিত বিস্ময়ে আত্মহারা হইয়া উঠিবে। বেলা বাড়িয়া উঠিবার পূর্বেই পিসীমার পুনঃ পুনঃ সস্নেহ তাড়নায় লক্ষ্মী সুন করিয়া আসিলে তিনি উৎকণ্ঠা প্রকাশ করিয়া বলিলেন, তোমার রোগা শরীর বীেমা, নীচে গিয়ে কাজ নেই, এইখানেই ঠাই করে। ভাত দিয়ে যাক । লক্ষ্মী আপত্তি করিয়া সহস্যে কহিল, শরীর আগের মতই ভাল হয়ে গেছে পিসীমা, আমি রান্নাঘরে গিয়েই খেতে পারব, ওপরে বয়ে আনবার দরকার নেই। চল, নীচেই যাচ্চি । পিসীমা বাধা দিলেন, শিবুর নিষেধ আছে জানাইলেন এবং তাঁহারই আদেশে ঝি ঘরের মেঝেতে আসন পাতিয়া ঠাই করিয়া দিয়া গেল । অঃ স্বঃ-৩ l,