পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• সকলেই কেমন যেন অজানা আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিল । সেদিন বেলা প্রায় তৃতীয় প্রহর, লক্ষ্মী সুন্নানের ঘর হইতে নিঃশব্দ মৃদুপদে প্রাঙ্গণের একধার দিয়া উপরে যাইতেছিল, পিসীমা রান্নাঘরের বারান্দা হইতে দেখিতে পাইয়া চীৎকার করিয়া উঠিলেন, দেখ বীেমা, বিপিনের বীেয়ের কাজ !—আঁ। মেজবীে, শেষকালে চুরি শরু করলে ? হরিলক্ষ্মী কাছে গিয়া দাড়াইল । মেজবৌ মেঝের উপর নির্বাক অধোমুখে বসিয়া একটা পাত্রে অন্ধব্যঞ্জন গামছা ঢাকা দেওয়া সম্মুখে রাখা ; পিসীমা দেখাইয়া বলিলেন, তুমিই বল বোমা, এত ভাত-তরকারি একটা মানুষে খেতে পারে ? ঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ছেলের জন্যে ; অথচ বার বার করে মান করে দেওয়া হয়েছে । শিবচরণের কানো গেলে আর রক্ষে থাকবে না। —ঘাড় ধরে দূর করে তাড়িয়ে দেবে । বেীমা, তুমি মনিব, তুমিই এর বিচার করা। এই বলিয়া পিসীমা যেন একটা কর্তব্য শেষ করিয়া হাফ ফেলিয়া বঁচিলেন । তাহার চীৎকার-শব্দে বাড়ির চাকর দাসী, লোকজন যে যেখানে ছিল, তামাশা দেখিতে ছুটিয়া আসিয়া দাড়াইল, আর তাহারই মধ্যে নিঃশব্দে বসিয়া ও-বাড়ির মেজীবী ও তাহার কত্রী এ-বাড়ির গৃহিণী । এত ছোট, এত তুচ্ছ বস্তু লইয়া এতবড় কদর্য কাণ্ড বাধিতে পারে, লক্ষ্মীর তাহা স্বপ্নের অগোচর ; অভিযোগের জবাব দিবে কি, অপমানে, অভিমানে লজ্জায় সে মুখ তুলিতেই পারিল না। লজ্জা অপরের জন্য নয়, সে নিজের জন্যই। চোখ দিয়া তাহার জল পড়িতে লাগিল, তাহার মনে হইল, এত লোকের সম্মুখে সে-ই যেন ধরা পড়িয়া গেছে এবং বিপিনের স্ত্রী-ই তাহার বিচার করিতে বসিয়াছে । মিনিট দুই-তিন এমনইভাবে থাকিয়া সহসা প্রবল চেষ্টায় লক্ষ্মী আপনাকে সামলাইয়া লইয়া কহিল, পিসীমা, তোমরা সবাই একবার এ-ঘর থেকে যাও । তাহার ইঙ্গিতে সকলে প্রস্থান করিলে লক্ষ্মী ধীরে ধীরে মেজবৌয়ের কাছে গিয়া বসিল : হাত দিয়া তাহার মুখ তুলিয়া ধরিয়া দেখিল, তাহারও দুইচোখ বাহিয়া জল পড়িতেছে। কহিল, মেজবেী, আমি তোমার দিদি, এই বলিয়া নিজের অঞ্চল দিয়া তাহার অশ্রু মুহাইয়া • ठिल } ৩৭