পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিমন্ত্রণও লইয়া গেল । সে চলিয়া গেলে, এই রূপ এবং ঐশ্বর্ষের কাহিনীর তরঙ্গগুলা যখন অল্পে অল্পে শান্ত হইয়া আসিতে লাগিল, এবং তাহার প্রতিধ্বনিগুলা মেরির মস্তিষ্কের ভিতর ঠোকাঠুকি করিয়া ক্রমশঃ হীনবল হইয়া ধীরে ধীরে শূন্যে মিলাইয়া যাইতে লাগিল এবং যে অবশিষ্ট স্পন্দনটুকু নাচিয়া বেড়াইতেছিল, তাহাও যখন অন্য আর একটি অসীম সৌন্দর্যের পার্থে কাতরভাবে ছুটিয়া পলাইবার প্রয়াস করিতে লাগিল, তখন তাহার বোধ হইল এই ঝোঁকের উপর আকস্মিক নিমন্ত্রণকার্যটা তেমন যুক্তিসঙ্গত হয় নাই । সন্ধ্যার পর সে আসিবে, দুইজনে একত্র আহার করিতে হইবে, হয়ত বা আর কেহই থাকিবে না, কত গল্প কত কথা বলিবার ও শুনিবার উপায় থাকিবে, কিন্তু মেরিয় তাহাতে আর তেমন মন উঠিল না। যদি আর কেহ জানিতে পারে ? যদি তাহার ক্লেশ বোধ হয় ? চঞ্চল হস্তে মেরি এক খণ্ড কাগজ লইয়া লিখিল, “তুমি সন্ধ্যার পর আসিও না , আমার শরীর মন্দ বোধ হইতেছে।” কিন্তু এ পত্র চালাসের নিকট পাঠাইতে লজ্জা বোধ হইল। অনেক চিন্তা করিয়া মেরি অবশেষে এইরূপ লিখিল “যখন আসিবে তখন আর তিন চারিজন বন্ধুকে আনিও । আনিতে পারিলে নিতান্ত সন্তুষ্ট এবং সুখী হইব ।’ ভূত্য পত্র লইয়া চলিয়া গেল । অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে রাত্রে চালাস আরও দুই-তিনজন বন্ধুকে সঙ্গে আনিল । আহারাদি শেষ করিয়া সকলেই একবাক্যে মেরিকে গান গাহিবার জন্য ধরিয়া বসিল । ইচ্ছা না থাকিলেও অতিথির অনুরোধ রাখিতে হইল ; পিয়ানো-এ ঝঙ্কার দিয়া মেরির সুকণ্ঠ দুই-তিনটি সপ্তকের মধ্যে খেলা করিয়া ছুটিতে লাগিল, উৎসাহ ও আনন্দে চার্লস প্রভৃতি কয়েকবার উচ্চ শব্দ করিয়া উঠিল, কেহ বা আবেগের সহিত দুই-এক পদ সঙ্গে সঙ্গে গাহিয়া ফেলিল । ক্রমশঃ শেরি হুইস্কি, ব্র্যাণ্ডি ও রমের শূন্যগর্ভ বোতলগুলির সংখ্যা যত বৃদ্ধি হইয়া চলিল, উৎসাহ, আবেগ উচ্চস্বর ততই পরিপূর্ণভাবে নৈশ আকাশে ঠেলিয়া ফুড়িয়া উঠিতে লাগিল। জানালার ভিতর দিয়া এ শব্দ লিওর পাঠাগারে যে to