পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তুমি অধঃপথে যাইতেছ, তাই সাবধান করিতে চাহিয়াছিলাম, কিন্তু তাহার পরিবর্তে ওরূপ মর্মান্তিক কথা শুনিবার বাসনা রাখি না ।” মেরি আরও ক্রুদ্ধ হইল। বলিল, “অধঃপথে কি করিয়া গেলাম ? ‘আমার তাই মনে হয়। ভদ্রঘরের স্ত্রীলোক, বিশেষত তুমি একান্তে অত রাত্রি পর্যন্ত যে আমোদ-প্রমোদ করিবে আমার সেটা ভাল বোধ হয় না। লোকেই বা কি বলিবে ? আবার লোকের কথা ! মেরি অস্থির হইয়া উঠিল । কহিল, লোকে কিছুই মনে করে না । তুমি দরিদ্র কিন্তু আমার ধন ঐশ্বর্য আছে, তোমার মত অনবরত পরিশ্রম করিয়া আমার খাদ্য সংগ্রহ করিতে হইবে না, তোমার মত নির্জন গৃহে বসিয়া জনসমাজের নিকট অপরিচিত থাকিলেই বরং লোকে মন্দ বলিবে ।’ তাহার পর একটু বিদ্রুপের হাসি হাসিয়া বলিল, “লিও, আপনার ভাগ্য দিয়া আমার ভাগ্য গড়িয়া তুলিবার চেষ্টা করিও না-পিতা আমার জন্য অভিশাপ এবং মর্মপীড়া রাখিয়া যান নাই-যাহা সুখের, যাহা বাঞ্জিত, সমস্তই যথেষ্ট দিয়া গিয়াছেন । যাহার এত আছে তাহার পক্ষে দু-দশজন বন্ধুবান্ধবকে নিমন্ত্রণ করিয়া আমোদ-প্রমোদ করিলে কেহই দুষে না ।” এত কথা মেরি কহিতে জানে, লিণ্ড তাহা জানিত না ; এত স্নেহ, এত করুণা যে এত তীব্র বিষ ঢালিয়া তাহার সমস্ত চৈতন্য ওলট-পালট করিয়া দিতে পারে, সে ধারণা লিও করিতে পারে নাই।--তাই নিতান্ত নিজীব অবসন্নভাবে বসিয়া পড়িল । কোন উত্তর বা কোনরূপ প্রতিবাদ খুজিয়া পাইল না। রাগের মাথায় মেরি চলিয়া গেল, তাহা সে দেখিল কিন্তু ফিরাইতে পারিল না, ইচ্ছাও বড় বেশি ছিল না, কিন্তু দুটো কথা বলিতে পারিলে বোধ হয় ভাল হইত । আপনার কক্ষে পৌঁছিয়া মেরি, একখণ্ড রুমালে মুখ আবৃত করিয়া একটা সোফার উপর বসিয়া পড়িল-সমস্ত শরীরে অগ্নির উত্তাপ বাহির হইতেছে । এই সময় একজন ভূত্য আসিয়া কহিল, চালােস অপেক্ষা করিতেছেন। মেরি মুখ তুলিয়া তাহার পানে তীব্র কটাক্ষ করিয়া কৰ্কশ-কণ্ঠে చి