পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভাগী তাহার অভাগ্য ও শিশুপুত্র কাঙালীকে লইয়া গ্রামেই পড়িয় রহিল। তাহার সেই কাঙালী বড় হইয়া আজ পনরায় পা দিয়াছে । সবেমাত্র বেতের কাজ শিখিতে আরম্ভ করিয়াছে, অভাগীর আশা হইয়াছে আরও বছরখানেক তাহার অভাগ্যের সহিত যুঝিতে পারিলে দুঃখ ঘুচিবে । এই দুঃখ যে কি, যিনি দিয়াছেন তিনি ছাড়া আর কেহই জানে না । কাঙালী পুকুর হইতে আঁাচাইয়া আসিয়া দেখিল তাহার পাতের ভুক্তাবশেষ মা একটা মাটির পাত্রে ঢাকিয়া রাখিতেছে, আশ্চর্য হইয়' জিজ্ঞাসা করিল, তুই খেলি নে মা ? বেলা গড়িয়ে গেছে বাবা, এখন আর ক্ষিদে নেই । ছেলে বিশ্বাস করিল না বলিল, না, ক্ষিদে নেই বৈ কি ! কৈ, দেখি তোর হাড়ি ? এই ছলনায় বহুদিন কাঙালীর মা কাঙালীকে ফাঁকি দিয়: আসিয়াছে। সে হাড়ি দেখিয়া তবে ছাড়িল । তাহাতে আর একজনের মত ভাত ছিল। তখন সে প্রসন্নমুখে মায়ের কোলে গিয়া বসিল । এই বয়সের ছেলে সচরাচর এরূপ করে না, কিন্তু শিশুকাল হইতে বহুকাল যাবৎ সে রুগ্ন ছিল বলিয়া মায়ের ক্রেগড় ছাড়িয়া বাহিরের সঙ্গীসার্থীদের সহিত মিশিবার সুযোগ পায় নাই ! এইখানে বসিয়াই তাহাকে খেলাধূলার সাধ মিটাইতে হইয়াছে। একহাতে গলা জড়াইয়া মুখের উপর মুখ রাখিয়াই কাঙালী চকিত হইয়া কহিল, মা, তোর গ যে গরম, কেন তুই আমন রোদে দাড়িয়ে মড়া-পোড়ানো দেখতে গেলি ? কেন আবার নেয়ে এলি ? মড়া-পোড়ানো কি তুই মা শশব্যাস্তে ছেলের মুখে হাত চাপা দিয়া কহিল, ছি বাবা, মড়াপোড়ানো বলতে নেই, পাপ হয় ? সতী-লক্ষ্মী মা-ঠাকুরুণ রথে করে সগ্যে গেলেন । ছেলে সন্দেহ করিয়া কহিল, তোর এক কথা মা ! রথে চড়ে কেউ নাকি আবার সগো যায় {