পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশীতিপর বৃদ্ধও মনে করিল, তাহার জীবনে এরূপ কণ্ঠস্বর শুনে নাই । ধর্মপরায়ণা বৃদ্ধ মনে করিল জগতের শেষ দিনটিতে বুঝি দেবতাগণ এই-- রূপ সংগীত করিবেন । লাহরে লহরে সে স্বর কক্ষ ভরিয়া আকাশে উঠিতে লাগিল ; ঘুর্ণবায়ু যেমন রাস্তার ধূলা, কুটা, তৃণ, কঙ্কর সমস্তই এক সাথে ঘুরাইয়া লইয়া আকাশে উঠে, এ স্বরও তেমনি বালক, যুবক, প্রৌঢ় বৃদ্ধ প্রভৃতি সকলের মন একসাথে উপরে উড়াইয়া চলিল। এরূপ মুগ্ধ করিতে জাদুকর বোধহয় পরিত না । নিম্পন্দ নীরব-কাহারো মুখে কথা নাই, অনেকের শরীরে চৈতন্যের লক্ষণটুকু পর্যন্ত নাই। ঠিক কোন সময়ে গীতটি শেষ হইল, অনেকেই তাহা বুঝিতে পারিল না, তাহার পর পিয়ানো যখন ঝাম ঝাম ঝাম করিয়া তাহার শেষ ঝঙ্কারটুকু মুগ্ধ আকাশের তরঙ্গ শ্রেণীর শেষ গতিটুকু বিতরণ করিয়া স্তব্ধ হইল, তখন সেই আহুত জনমণ্ডলী নিতান্ত উচ্ছঙ্খলভাবে একেবারে পিয়ানোর চতুষ্পার্শ্বে ঘিরিয়া দাড়াইল, প্রত্যেকে প্রত্যেকের মুখপানে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘কে ? কেহ উত্তর দিতে পারিল না । লিও নিজের মুখ নীচু করিয়া রাখিয়াছিল। আবার পিয়ানো ঝমােঝম করিয়া উঠিল, নিমেষে মুগ্ধ, বিস্মিত জনমণ্ডলী সরিয়া গেল,-যে যেখানে পাইল স্তব্ধ হইয়া বসিয়া পড়িল, শুনিল নিজীব পিয়ানো সজীব হইয়া! ক’ত দি কথা বলিয়া যাইতেছে, পুনর্বার কণ্ঠস্বর তাহা স্পষ্টতর করিয়া দিল : লিও বিরহের গান গাইতে ছিল ; -কোন সুদূর সমুদ্রকুলে বসিয়া পরিত্যক্ত রাজকন্যা তাহার প্রণয়ীর জন্য সমুদ্রকে ডাকিয়া বলিতেছে, ‘ওগো সমুদ্র আমার স্বামীকে ফিরাইয়া দাও ;-ফিরাইয়া দাও ;-কোন আতলগর্ভে তাহাকে নিমজিত করিয়া লুকাইয়া রাখিয়াছ ; হায় দয়া করিয়া ফিরাইয়া দাও, না হইলে আমাকেও তোমার একটি তরঙ্গ পঠাইয়া টানিয়া লাও । এ দুঃসহ জীবনের ভার আর বহিতে পারি না ’ গানের ভাবটা এইরূপ { শ্রোতৃবর্গের মধ্যে কাহার কিভাবে কাটিতেছিল তাহা পূর্বে বলিয়াছি, কিন্তু মেরির কথা বলি নাই। সে এতক্ষণ একটা কোচের বাজুতে মাথা রাখিয়া আকুলভাবে কঁাদিতেছিল। তাহার মনে হইতেছিল-বুঝি তাহার সমস্ত হৃদয়খানা সঙ্গীত হইয়া কঁাদিয়া ফিরিতেছে-সমূদ্র কি, তাহা সে: GS