পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কণ্ঠস্বর চিনিতে পারিল না। যখন চিনিল তখন তাহার চৈতন্য লুপ্ত হইয়া আসিতেছিল,-তাহার পর এই নীরব প্রচ্ছন্ন অবমাননা । যাতনার তাড়নায় সে-রাত্রের জন্য মেরি চক্ষু মুদ্রিত করিতে পারিল না। { { অ্যাট ৷ আরও তিন দিন নিঃশব্দে অতিবাহিত হইয়া গেল ! এইবার, এতদিন পরে লিওর চক্ষে খুব বড় দু ফোটা জল আসিয়া পড়িল । আজ মাসাধিক কাল হইল মেরি অল্পে অল্পে সরিয়া দাড়াইয়াছে, সামর্থ্যানুযায়ী অবহেলা তাচ্ছিল্য করিতে ত্রুটি করে নাই, কিন্তু এতদিন পরে অবমাননা করিয়াছে। সে যে আত্মসম্মান তুচ্ছ করিয়া অনাতুত অতিথি হইতে গিয়াছিল এবং তাহার পরিবর্তে অবজ্ঞার মৌন জ্বালাটুকু লইয়া ফিরিয়া আসিয়াছে, এইটাই তাহাকে অধিক বিচলিত করিয়া ফেলিয়াছে । তিনি দিন অতিবাহিত হইল, সে একবার আসিল না, একবার ডাকিল না, আর চােখের জলের অপরাধ কি ? কিন্তু শুধু কি তাই ? লিওর অন্তরের ভিতর হইতে একটা ধিক্কার উঠিয়াইেছ । পরে দুঃখ দিলে চোখে জল আসে, কিন্তু সেজন্য আপনাকে কেহ ধিক্কার দেয় না, বরং নিজেকে একটু উচ্চ স্থানে দাড় করাইয়া একটু সন্তুনা পাইবার চেষ্টা করে। অদৃষ্টকে দোষ দিয়া, কর্মফলের নিন্দা করিয়া, পরের মন্দা চরিত্রকে গালি পাড়িয়া অনেকটা শান্ত হওয়া যায় ; কিন্তু যাহার। আপনাকে আপনি ধিক্কার দিতে ইচ্ছা হয়--তাহার দুঃখ রাখিবার স্থান নাই, তাহার সান্তনা এ জগতে আছে কিনা বলিতে পারি না । লিওর একফোটা অশ্রু মেরির জন্য পড়িয়াছিল, কিন্তু শেষ ফোটাটি যখন চক্ষু ছাপাইয়া গণ্ড বাহিয়া বক্ষে আসিয়া পড়িল, তখন তাহার হৃদয়ের প্রতি গ্রন্থিগুলি শিথিল হইয়া যাইবার মত হইল। এ আশ্রষ্ঠ তাহার নিজের জন্য পড়িয়াছে।--সকলের এমন দুর্ভাগ্য ঘটে না, ঘটিলেও হয় তা বুঝিতে পারে না, কিন্তু যদি কখন কেহ বুঝিতে পারে, তাহা হইল সে লিওর মত নিশ্চয়ই যুক্ত করে উধ্বমুখে কহে, ‘ভগবান, এমন অশ্রুপাত কাহাকেও করাইও না।” এক মাস হইতে লিওর অন্তরে সুখ নাই, কিন্তু সম্মান ছিল, ݂