পাতা:অভাগীর স্বর্গ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে রাত্রে লিওর পুরাতন ভূত্য দুইটি বড় বেশী রকম কঁাদিতে লাগিল । আকস্মিক এরূপ সংবাদে তাহদের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হইল। প্রত্যেকে ছয় মাসের করিয়া অধিক বেতন পুরস্কার পাইয়াছে, তথাপি কঁদিতে ছাড়িল না । আবশ্যকীয় দ্রব্যাদি গুছাইয়া বঁধা হইল, বাকী যাহা রহিল, হকের লোক তাহা বুঝিয়া লইল । কাল সপ্তদিন পূর্ণ হইবে, পিতৃঋণ পরিশোধ করিয়া লিও কাল জন্মের মত কোরেল গ্রাম ছাড়িয়া যাইবে, চিরপুরাতন ভূত্যেরা তাই কঁাদিয়া শেষ করিতে পারিতেছে না । লিও তাহাদিগকে সান্থনা দিতেছে-যদি বঁচিয়া থাকি দুই বৎসরের মধ্যে আবার আমার কাছে আসিতে পাইবে । লিওকে তাহারা বাল্যকাল হইতে সত্যবাদী বলিয়া বিশ্বাস করিত-সেইজন্য কতক শান্ত হইয়াছে । লিও ভাবিতেছে-জনক-জননীর মুখ, মেরি, তাহার জননী, পুস্তকের রাশি, ফুলের বাগান তাহার চির সহচর ঐ ক্ষুদ্র পাঠাগার-আর ভাবিতেছে মেরি তাহাকে গৃহত্যাগী করিয়াছে। দুশ্চিন্তা ও নানা কারণে সে রাত্রে তাহার প্রবল জ্বর বোধ হইল । সমস্ত রাত্রি একরূপ অচৈতন্য অবস্থায় কাটিল-দ্বিপ্রহরের পর জ্বরত্যাগ হইল, কিন্তু শরীর নিতান্ত দুর্বল। সামান্য হিনিসপজত্র যাহা সাথে লইয়াছিল। তাহা স্টেশনে পাঠাইয়া দিয়া নোটের তাড়া হাতে লইয়া মেরির গৃহে উপস্থিত হইল। মেরি উপরে বসিয়া ছিল, ভূত্য সংবাদ দিল, “লিও টাকা লইয়া আসিয়াছে।” মেরি। Bond লইয়া নীচে নামিয়া আসিল । কিন্তু টাকার কথায় সে আদৌ বিশ্বাস করে নাই, এবং এজন্য আপনাকেও প্রস্তুত করে নাই ; সমস্ত দিন ধরিয়া সে এইরূপ একটা কল্পনা করিতেছিল, সে ভাবিতেছিল। আজ তাহার চিরবাঞ্ছিত ধরা দিবে, আজ তাহার উচ্ছঙ্খল অতৃপ্তি পদতলে লুটাইয়া পড়িবে। তখন সে কি করিবে, কেমন করিয়া আপনার গাম্ভীর্য বজায় রাখিয়া সে সময়ের প্রবল ঝঙ্কাবায়ু মাথায় পাতিয়া লইবে, তাহাই স্থির করিয়াছিল । ঋণ পরিশোধ করিয়া লিও যে তাহাকে জন্মের মত পরিত্যাগ করিয়া যাইতে পারে, এ