পাতা:অরক্ষণীয়া - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরক্ষণীয়া br সে যে নিজের দাদার সহিত জ্ঞানদার বিবাহ ঘটাইবার জন্য স্বামীকে নিয়োজিত করিয়াছে এবং ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত করিতেছে, প্রথম হইতেই এই কথাটা দুৰ্গা স্বতঃসিদ্ধের মত মানিয়া লইয়াছিলেন। বৌ গলাটা আজ খাটো করিয়াই কহিল, তারকেশ্বরে পাশ-করা ডাক্তার আছে-তোমার দাদাকে আনতে পাঠিয়ে দিয়েচি ঠাকুরবি । জ্বর যেন রোজ বোজ বেশিই হচ্চে-এ ত ভাল না। দুৰ্গা অব্যক্তস্বরে যাহা বলিলেন তাহা শোনা গেল না, কারণ এই সুসংবাদ শুনিয়াও তিনি অন্তরের ভিতর হইতে প্রসন্ন হইতে পারিলেন না । বেী সংসারের কাজে চলিয়া গেল। জ্ঞানদা বালিশের তলা হইতে একখানি চিঠি বাহির করিয়া কহিল, জবাব দিয়েচেন । কৈ, দেখি দেখি, বলিয়া মা সেখানি যেন কাড়িয়া লইলেন । কিন্তু পবক্ষণেই অসহ্য আগ্রহ দমন করিয়া চিঠিখনি দুই মুঠার মধ্যে লইয়া চুপ করিয়া বসিয়া বহিলেন। একবাব মনে করিলেন, খুলিয়া পৃডি । আবার ভাবিলেন, না, উচিত নয় । মেয়ে যেন হাতেই দিয়েছে, কিন্তু মা হইয়া তিনি পড়িবেন কি করিয়া । মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, কি লিখেচে অতুল ? জ্ঞানদা ইতিমধ্যে পাশ ফিরিয়া শুইয়াছিল। সংক্ষেপে কহিল, আসা উচিত ছিল না-এই-সব। পত্রের এই দুটি কথা শুনিয়াই মায়ের দুই চক্ষে জল আসিয়া পড়িল । তিনি মনে মনে আবৃত্তি করিলেন, আসা উচিত ছিল না-এই-সব। অতুলের মুখখানি স্মরণ করিয়া তাহাকে অসংখ্য আশীৰ্বাদ করিয়া, দুৰ্গা মাতৃস্নেহে বিগলিত হইয়া মনে মনে বলিলেন, না জানি বাছার কতই না অভিমান, কতই না মর্মান্তিক ব্যথা এই দুটি কথার মধ্যে লুকান আছে। এখানে আসিয়া জ্ঞানদা জ্বরে পড়িয়াছে --তাহাতেই ত বাছা সেদিন রাগ করিয়া বলিয়াছিল, ইহাদের গঙ্গাযাত্রা দেখিতে কলিকাতা হইতে আসিয়াছি । সত্যই তাঁ। আমি নিজে যাই করি এবং যেখানেই যাই, সে আলাদা কথা । কিন্তু মেয়ে লইয়া