পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১০০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সাধুসন্তদের অলৌকিক ক্ষমতা
১০৩

 মানসিক কারণে যে-সব অসুখ হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে, শরীরের বিভিন্ন স্থানের ব্যথা, মাথার ব্যথা, হাড়ে ব্যথা, স্পণ্ডালাইটিস আরথ্রাইট্রিস, বুক ধড়ফড়, পেটের গোলমাল, পেটের আলসার, গ্যাসট্রিকের অসুখ, ব্লাডপ্রেসার, কাশি, ব্রঙ্কাইল অ্যাজমা, ক্লান্তি অবসাদ ইত্যাদি। মানসিক কারণে শারীরিক অসুখের ক্ষেত্রে ঔষধি-মূল্যহীন ক্যাপসুল, ইনজেকশন বা ট্যাবলেট প্রয়োগ করে অনেক ক্ষেত্রেই ভাল ফল পাওয়া যায়। এই ধরনের বিশ্বাস-নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলে ‘প্লাসিবো’ (placebo) চিকিৎসা পদ্ধতি। Placebo কথার অর্থ “I will please.” বাংলায় অনুবাদ করে বলতে পারি, “আমি খুশি করব।” ভাবানুবাদ করে বলতে পারি আমি “আরোগ্য করব।”

 রোগিণীর পারিবারিক চিকিৎসকের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলে জানলাম, কোনও পরীক্ষাতেই রোগের কোনও কারণ ধরা পরেনি। ডাক্তারদের অনুমান ব্যথার কারণ সম্পূর্ণ মানসিক। রোগিণীর মনে সন্দেহের পথ ধরে একসময় বিশ্বাসের জন্ম নিয়েছে তাঁর উরুর ফোঁড়া সারেনি, বরং আপাত শুকনো ফোঁড়ার মধ্যে রয়েছে গ্যাংগ্রিনের বিষ। রোগিণীর বিশ্বাসবোধকে কাজে লাগিয়ে কেমনভাবে প্ল্যাসিবো চিকিৎসা চালাতে হবে সে বিষয়ে একটা পরিকল্পনার কথা খুলে বললাম।

 এই ঘটনার কয়েক দিন পরে রোগিণীর পারিবারিক ডাক্তার সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়া উরুর ফোড়ার ওপর নানা রকম পরীক্ষা চালিয়ে একটা মেশিনের সাহায্যে রেখা-চিত্র তৈরি করে গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িয়ে আবার রেখা-চিত্র তোলা হলো। দুবারের রেখা-চিত্রেই রেখার প্রচণ্ড রকমের ওঠা-নামা লক্ষ্য করে স্থির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন, গ্যাংগ্রিনের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। একটা হৈ-চৈ পড়ে গেল। নিউ ইয়র্কে খবর পাঠিয়ে দ্রুত আনানো হলো এমনই চোরা গ্যাংগ্রিনের অব্যর্থ ইন্‌জেকশন। সপ্তাহে দুটি করে ইনজেকশন ও দু’বার করে রেখাচিত্র গ্রহণ চলল তিন সপ্তাহ। প্রতিবার রেখা-চিত্রেই দেখা যেতে লাগল রেখার ওঠা-নামা আগের বারের চেয়ে কম। ওষুধের দারুণ গুণে ডাক্তার যেমন অবাক হচ্ছিলেন, তেমন রোগিণীও। প্রতিবার ইন্‌জেকশনেই ব্যথা লক্ষণীয়ভাবে কমছে। তিন সপ্তাহ পরে দেখা গেল রেখা আর আঁকা-বাঁকা নেই, সরল। রোগিণীও এই প্রথম অনুভব করলেন, বাস্তবিকই একটুও ব্যথা নেই। অথচ মজাটা হলো এই যে, বিদেশী দামী ইন্‌জেকশনের নামে তিন সপ্তাহ ধরে রোগীণীকে দেওয়া হয়েছিল স্রেফ ডিসটিলড্ ওয়াটার।

 পঞ্চম সপ্তাহে ‘আজকাল’ পত্রিকার রবিবারের ক্রোড়পত্র একটা আমার প্রবন্ধ প্রকাশিত হল। শিরোনাম ‘বিশ্বাসে অসুখ সারে’! মহিলার ঘটনাটির উল্লেখ করে লেখাটা শুরু করেছিলাম।

 বছর পনেরো আগের ঘটনা। আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে দমদমের ‘শান্তিসদন’ নার্সিং হোমে ভর্তি হন। ওই সময় শান্তি সদনের অন্যতম কর্ণধার অতীন রায়ের