পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১০২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সাধুসন্তদের অলৌকিক ক্ষমতা
১০৫

করেছেন। এবার ব্যথা চিরকালের মতো সেরে যাবেই।

 ডাক্তারবাবু ইনজেকশনের নামে ডিসটিলড ওয়াটার পুশ করলেন। রোগিণীর ব্যথাও পুরোপুরি সেরে গেল।

 কয়েক বছর কুড়ি আগেও কলকাতা জেনারেল পোস্টে অফিসের আশপাশে এক গৌরকান্তি, দীর্ঘদেহী বৃদ্ধ তান্ত্রিক ঘুরে বেড়াতেন। গলায় মালা (যতদূর মনে পড়ছে রুদ্রাক্ষের)। মালার লকেট হিসেবে ছিল একটি ছোট্ট রুপোর খাঁড়া। বৃদ্ধকে ঘিরে সব সময়ই অফিস-পাড়ার মানুষগুলোর ভিড় লেগেই থাকত। এঁদের উদ্দেশ্য ছিল তান্ত্রিকবাবার অলৌকিক শক্তি সাহায্য নিয়ে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ থেকে নিজেকে মুক্ত করা। বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করে দেখেছি এঁদের অসুখগুলো সাধারণত অম্বলের ব্যথা, হাঁপানি, শরীরের বিভিন্ন স্থানের ব্যথা, বুক ধড়ফড় অর্শ, বাত ইত্যাদি।

 সাধুবাবা রোগীর ব্যথার জায়গায় লকেটের খাঁড়া বুলিয়ে জোরে জোরে বার কয়েক ফুঁ দিয়ে বলতেন, “ব্যথা কমেছে না?”

 রোগী ধন্দে পড়ে যেতেন। সত্যিই ব্যথা কমেছে কী কমেনি, বেশ কিছুক্ষণ বোঝার চেষ্টা করে প্রায় সকলেই বলতেন, “কমেছে মনে হচ্ছে।”

 এই আরোগ্য লাভের পিছনে তান্ত্রিকটির কোনও অলৌকিক ক্ষমতা কাজ করত না, কাজ করত তান্ত্রিকটির অলৌকিক ক্ষমতার প্রতি রোগীদের অন্ধ বিশ্বাস।

 এবারের ঘটনাটা আমার শোনা। বলেছিলেন প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিশ্বনাথ রায়। ডাঃ রায়ের সার্জারির অধ্যাপক ছিলেন ডাঃ অমর মুখার্জি। তাঁর কাছে চিকিৎসিত হতে আসেন এক মহিলা। মহিলাটির একান্ত বিশ্বাস, তাঁর গলস্টোন হয়েছে। এর আগে কয়েকজন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকেই পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন পেটে ব্যথার কারণ গলস্টোন নয়। চিকিৎসকদের এই ব্যাখ্যায় মহিলা আদৌ সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

 ডাঃ মুখার্জি মহিলার গল-ব্লাডারের এক্স-রে করালেন। দেখা গেল কোনও স্টোন নেই। তবু ডাঃ মুখার্জি তাঁর ছাত্রদের শিখিয়ে দিলেন রোগিণীকে বলতে, তাঁর গলস্টোন হয়েছে। এক্স-রে-তে দুটো স্টোন দেখা গেছে। অপারেশন করে স্টোন দুটো বার করে দিলেই ব্যথার উপশম হবে।

 রোগিণীকে জানানো হলো অমুক দিন অপারেশন হবে। নির্দিষ্ট দিনে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞান করে পেটের চামড়া চর্বিস্তর পর্যন্ত কাটলেন এবং আবার সেলাই করে দিলেন। ও.টি. স্টাফের হাতে ছোট্ট দুটো রঙিন পাথর দিয়ে ডাঃ মুখার্জি বললেন, রোগিণী জ্ঞান ফেরার পর স্টোন দেখাতে চাইলে পাথর দুটো দেখিয়ে বলবেন, এ-দুটো ও পিত্তথলি থেকেই বেরিয়েছে।

 রোগিণী কয়েকদিন হাসপাতালেই ছিলেন। সেলাই কেটেছিলেন ডাঃ রায়। রোগিণী