পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাধুসন্তদের অলৌকিক ক্ষমতা
১১৫

এগিয়ে আসবেন, এমন ভরসা করেন না সুরথ। আমার কাছে সুরথ প্রথমেই যে অভিযোেগ করলেন, তা হলাে, “যারা এখন ডাববাবা সেজে স্বপ্নাদ্য ওষুধ দিচ্ছে তারা সব ঠগ, ডাকাত। স্রেফ লােক ঠকাচ্ছে। স্বপ্ন দেখলাম আমি। আমি না জানানাে সত্ত্বেও ওরা ওষুধ তৈরি করছে কি করে? থানায় খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, ওদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযােগ আছে। পয়সা রােজগারের ধান্দায় ওরা প্রচার করছে বনবিবির চরণামৃত মেশানাে ভাবের জল খেলে কান-কটকট থেকে ক্যানসার সবই নাকি সারে। অথচ আমাকে মা স্বপ্নে দেখা দিয়ে জানিয়েছিলেন, চরণামৃতসহ ডাবজল পানে দুটি মাত্র অসুখ সারবে। হাঁপানি ও পেটের অসুখ।

 বুঝলাম, বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে কী কী অসুখ সারানাে যায়, সে বিষয়ে সুরথবাবু কিঞ্চিৎ ওয়াকিবহাল।

 প্রচুর কথা বলিয়ে, এক সময় জানতে পারলাম চরণামৃত তৈরি করতেন গরম জল, ডাবের জল, দুধ, সন্দেশ, বাতাসা ও কর্পূর মিশিয়ে।


 এর কয়েকদিন পর গিয়েছিলাম বনবিবির থানে। দেখে এটুকু বুঝেছিলাম, এখন আসল ডাব-বাবা স্বয়ং ফিরে এসে—‘সব ঝুট হ্যায়’, বলে চ্যাঁচালেও বিশ্বাসে আচ্ছন্ন মানুষগুলাে তাতে কান দেবে না।

 ডাবে চরণামৃত মিশিয়ে দিচ্ছিলেন বিজয় মণ্ডলের নেতৃত্বে কিছু তরুণ। কথা হলাে বিজয় মণ্ডল, মন্দির কমিটির সম্পাদক হারাণ নস্কর ও কিছু খালি গা তেজী তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে।

 জিজ্ঞেস করলাম, “বনবিবি স্বপ্নে ওষুধ বাতলে দিয়েছিলেন সুরথ মণ্ডলকে। তিনি তাে আপনাদেরই ভায়েই নাকি উধাও। আপনারা তাে স্বপ্ন দেখেননি। তা হলে ওষুধ দিচ্ছেন কি করে?”

 হারাণ নস্কর জবাব দিলেন, “সুরথ মণ্ডল আমাদের ভয়ে গাঁ ছাড়া, এসব দুষ্ট লোকেদের মিথ্যে প্রচার। আসলে ঈর্ষা করা মানুষের সংখ্যাতো কম নয়, তারাই ওসব রটাচ্ছে। সুরথ একটু ভিতু আর নির্ঝঞাট মানুষ। এত ভিড়, এত মানুষজন সামলে সকাল থেকে রাত মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার মতাে মন কি সবার আছে? সুরথেরও ছিল না। সুরথ পালাল। তবে লােকটা ভাল ছিল। যাওয়ার আগে বিজয় মণ্ডলকে শিখিয়ে দিয়েছিল বনবিবির চরণামৃত তৈরির পদ্ধতি।

 বললাম, “সুরথবাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। উনি অবশ্য অন্য কথা বললেন। উনি নাকি কাউকেই স্বপ্নাদ্য ওষুধ তৈরির পদ্ধতি বলে জানি।”

 বিজয় মণ্ডল একটু উত্তেজিত হলেন। চড়া গলায় বললেন, “ও সব বাজে কথা।”

 হারাণ নস্কর পােড় খাওয়া মানুষ। এক গাল হেসে বললেন, “সুরথ না বললেই