পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমব্যথী চিহ্নের মহাপুরুষ
১৫১

সঞ্চারের (auto-suggestion} দ্বারা এমনটা ঘটাতে পেরেছিলেন। এই ঘটনার মধ্যে অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে, কিন্তু অলৌকিকতা নেই। অর্থাৎ, সকলের পক্ষেই এমনটা ঘটানাে সম্ভব নয় বটে, কিন্তু কিছু কিছু মানুষের বিশেষ শারীরিক ও মস্তিষ্কের গঠনের জন্য auto-suggestion-এর দ্বারা এই ধরনের ঘটনা তাদের পক্ষে ঘটানাে সম্ভব।

 ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবনেও নাকি এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল বলে তার জীবনী গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। একবার অনুকূলচন্দ্র কুষ্টিয়া যাচ্ছিলেন ঘােড়ার গাড়িতে। সহিস ঘােড়াকে চাবুক মারে চাবুকের দাগ ফুটে উঠেছিল অনুকূলচন্দ্রের গায়ে।


 মনােরােগ চিকিৎসক ডাঃ ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা পাভলভ পরিচিতি, ২য় পর্ব, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১০৭-এ একটি মেয়ের কথা পাওয়া যায়। মেয়েটির নাম অঞ্জনা। নিটোল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ১৯-২০ বছরের মেয়ে। বিয়ের বছরখানেক পর থেকেই দেখা দিয়েছে দাঁতে ব্যথা, সেইসঙ্গে বাঁ পাটায় অসাড়তা। মাঝে-মধ্যে ডান দিকে তলপেটে তীব্র যন্ত্রণা হয়।

 দাঁতের ডাক্তার, নিউরােলজিস্ট ও আরও কিছু ডাক্তার পরীক্ষা করেছেন। কেউই উপসর্গগুলাের কারণ খুঁজে পাননি।

 শেষ পর্যন্ত কারণ খুঁজে পেয়েছিলেন ডাক্তার গঙ্গোপাধ্যায়। বিয়ের আগে মেয়েটি একজন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ত। শিক্ষকের নাম বঙ্কিমবাবু। বয়েসে অঞ্জনার দ্বিগুণ, বিবাহিত ও সন্তানের পিতা। তবু মেয়েটি বঙ্কিমবাবুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বাড়ির লােকেরা বােধহয় কিছুটা সন্দেহ করেছিলেন, তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেন। অঞ্জনা প্রথমটায় বিয়েতে মত দেয়নি। কিন্তু, খুবই বিস্মিত হল ও দুঃখ পেল যখন দেখল তার মাস্টারমশাইও অঞ্জনার এই বিয়েতে আগ্রহী।

 অভিমানে অঞ্জনা বিয়েতে রাজি হলাে বটে, কিন্তু মনে চিন্তার বােঝা রয়ে গেল, এবার থেকে মাস্টারমশাই দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পেলে সে খবরও পাবে না। মাস্টারমশাইয়ের বাঁ পায়ে মাঝে-মাঝে একটা অসাড়তা দেখা দেয়, যখন অসাড়তায় মাস্টারমশাই কষ্ট পাবেন তখন সে থাকবে অনেক অনেক দুরে, সামান্য সহানুভূতিটুকু জানানােরও সুযােগ পাবে না।

 বিয়ের দিন পায়ের ব্যথায় বঙ্কিমবাবু অঞ্জনাকে দেখতে আসতে পারলেন। বিয়ের পর থেকেই অঞ্জনার দেখা দিল দাঁতে ব্যথা ও বাঁ পায়ের অসাড়তা। অঞ্জনার স্বামীর মাঝে-মধ্যে ডান দিকের তলপেটে খুব ব্যথা হয়। অঞ্জনারও মাঝে-মধ্যে শুরু হয়ে গেল ডান তলপেটে ব্যথা। এই সবগুলােই সমব্যথী-চিহ্নের ঘটনা। অঞ্জনা অবচেতন auto-suggestion-এর সাহায্যে মাস্টারমশাই ও স্বামীর রােগ-উপসর্গগুলাে নিজের দেহেও প্রকাশ করত।