পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

বেশি সুযোগ-সুবিধে সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া।” সে দায়িত্ব সরকারের, প্রশাসনের। আমাদের কাছে বিজ্ঞান আন্দোলনের অর্থ—“বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ গড়ার আন্দোলন, যুক্তিবাদী মানুষ গড়ার আন্দোলন, কুসংস্কার মুক্তির আন্দোলন।”

 আমাদের যুদ্ধ অলৌকিকের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের দুর্বলতাকে, অজ্ঞানতাকে কুসংস্কারকে ভাঙিয়ে খ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ করে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধে। যারা কুসংস্কারের আবর্জনা সাফ করার নাম করলে “মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত নয়” বলে সোচ্চার হয়, তাদের বিরুদ্ধে। যারা জনসাধারণের চেতনাকে বেশি দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে ভয় পায়, তাদের বিরুদ্ধে। যারা “জাতের নামে বজ্জাতি” করে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধে। যারা ধর্মের নামে মানুষের মানবিকতার চূড়ান্ত বিকাশ-গতিকে রুদ্ধ রাখতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে। আমরা সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছি, প্রতিটি বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী মানুষই খাঁটি ধার্মিক। একটা তলোয়ারের ধর্ম যেমন তীক্ষ্ণতা, আগুনের ধর্ম যেমন দহন, তেমনই মানুষের ধর্ম মনুষত্বের চরমতম বিকাশ। সেই বিচারে আমরাই ধার্মিক কারণ আমরা শোষিত মানুষদের মনুষ্যত্ববোধকে বিকশিত করতে চাইছি। মানুষের চিন্তায়, মানুষের চেতনায় বপন করতে চাইছি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের বীজ।

যারা কুসংস্কার দূরীকরণের কথা উঠলেই বলে, “আগে চাই
শিক্ষারবিস্তার, শিক্ষাই কুসংস্কার দূর করবে” তাদের স্মরণ
করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, শিক্ষা বিস্তারের অর্থ শুধু
বইয়ের পড়া মুখস্থ করা নয়, কুসংস্কার দূর
করাও শিক্ষা প্রসারের অঙ্গ। অশিক্ষা
বিতাড়নের চেয়ে বড় শিক্ষা
আর কী হতে পারে?

 জনশিক্ষা ও যথার্থ বিজ্ঞানচেতনা আজও এ দেশে দুর্লভ। আমরা সেই দুর্লভ কাজই সম্পূর্ণ করতে চাই। আমরা ঘটাতে চাই চিন্তার বিপ্লব, সাংস্কৃতিক বিপ্লব।

 আমরা জানি, যে দিন বাস্তবিকই কুসংস্কার বিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন দুর্বার গতি পাবে, সে-দিন দুটি জিনিস ঘটবে। এক: এই আন্দোলন যে শ্রেণিস্বার্থকে আঘাত হানবে সেই শ্রেণি তাদের স্বার্থরক্ষার তাগিদে, অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে তীব্র প্রত্যাঘাত হানবে। এই প্রত্যাঘাতের মুখে কেউ সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, কেউ পিছু হটবে। দুই: যুক্তিবাদী চিন্তা জনসাধারণের চেতনার জগতে যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটাবে তারই পরিণতিতে গড়ে উঠবে নতুন-নেতৃত্ব, যে নেতৃত্ব থাকবে সমাজ পরিবর্তনের, হুজুর-মজুর সম্পর্ক অবসানের সার্বিক বিপ্লবের অঙ্গীকার।