পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সমব্যথী চিহ্নের মহাপুরুষ
১৫৩

ফিসফিস করে কথা বলতে পারে। রোগীটি ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগে ভুগছিল। ডাঃ গাঙ্গুলি দেখলেন বিশেষজ্ঞের অভিমত functional paralysis of vocal chord। এই স্বর প্রথম যখন বন্ধ হয় তখন রোগীর ফ্রেনিক নার্ভ-এর ওপর অপারেশন চলছিল। বোঝা যায় ভয়ই এই অসাড়তার কারণ।

 স্বরের সাড় ফিরিয়ে দেওয়ার সম্মোহন-চিকিৎসা চালাতে গিয়ে ডাঃ গাঙ্গুলি আর এক সত্যকে আবিষ্কার করলেন, সেই সত্যের দিকেই আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

 রোগীটি ছিল পূর্ববঙ্গের এক বড় ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় পক্ষের শেষ সন্তান। ’৪৬ -এর দাঙ্গার পর ব্যবসা বেশ পড়ে যায়। এই সময় বাবা মারা যান। বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা ওকে আলাদা করে দেয়। কয়েক হাজার টাকা ও বিধবা মাকে নিয়ে আলাদা সংসার পাতলেও টাকাগুলোকে ঠিক কেমনভাবে ব্যবসায় খাটানো উচিত। ষোল বছরের বালক ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মায়ের পীড়াপীড়িতে বিয়েও করে ফেলে। মা আর বউকে দেশে রেখে সামান্য যা পুঁজি ছিল তাই নিয়ে এসে হাজির হয় কলকাতায়। কলকাতায় এসে ব্যবসা করতে গিয়ে প্রায় সব পুঁজিই লোকসান দিল। দূর-সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় এসে ওঠে। সেখানে জোটে শুধু অনাদর। এখানেই একদিন ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়ল। অনেক তদ্বিরের পর বেসরকারি হাসপাতালে জায়গা পেলেও সঞ্চয়ের শেষ তলানিটুকু এখানেই শেষ হয়ে যায়।

 চিকিৎসায় রোগী ভাল হয়। রোগীর দাদারা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গেই আছে শুনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওর দাদাদের চিঠি দেয়। কোন উত্তর আসে না। তিন তিনখানা চিঠি দিয়েও জবাব না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে জানিয়ে দেন, সুস্থকে আর হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয়, এবার বেড় খালি করতে হবে। পরদিনই দেখা যায় সুস্থ মানুষটি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গায়ে জ্বর, সঙ্গে কাশি। কয়েকদিন পর এক্স-রে করে দেখা গেল ফুসফুসে আবার ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।

 এবার রোগীটির স্থান হলো সরকারি উদ্বাস্তু হাসপাতালে। এখানে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করা গেল। বার-বারই রোগী চিকিৎসার দ্বারা সুস্থ হয়ে উঠছে এবং বেড খালি করে দেওয়ার কথা বলার পরই দেখা যাচ্ছে আবার ফুসফুসের পুরনো ক্ষত সক্রিয় হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় অপারেশন করতে গিয়েই এই স্বর নিয়ে বিপত্তি।

 ডাঃ ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি বুঝেছিলেন রোগীর জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে অসহায়তা ও আশ্রয়হীনতার মানসিকতা কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে না আনতে পারলে, মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের সহনশীলতা না বাড়াতে পারলে, শুধুমাত্র সম্মোহন-চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যাবে না। রোগ মুক্তির পর হাসপাতালের নিশ্চিত আশ্রয় থেকে অনিশ্চিত জীবন সংগ্রামের পথে নামতে হবে ভাবলেই রোগর উপসর্গগুলো আবার