পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৫৯
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
১৫৯

হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মােহন, নির্দেশ ১৫৯ রাতে সকলে যখন ঘুমােয়, আতঙ্কে আমার চোখে কিছুতেই ঘুম আসে না। ক্যামপােস খেয়ে দেখেছি, তাতেও কাজ হচ্ছে না। আমি আর পারছি না। আমাকে আপনার বাঁচাতেই হবে।” কথাগুলাে শেষ করবার আগেই ওর গলা ধরে এলাে। দেখলাম, ও একান্তভাবে কান্না চাপার চেষ্টা করছে। বেচারা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। বুজরুক জ্যোতিষী আর তান্ত্রিকদের ওপর রাগে সারা শরীর রি-রি করে উঠল। সমাজের বুকে বসে সম্মানের সঙ্গে ওরা প্রবীরকে একটু একটু করে খুন করছে। প্রবীরের মৃত্যু হলে তার জন্য দায়ী ওই সব প্রতারকরা। প্রবীরকে বললাম, “দুটো হাতই পাশাপাশি মেলে ধরাে তাে।” মেলে ধরল। হাতের রেখাগুলাের ওপর গভীরভাবে চোখ বােলাবার অভিনয় করলাম। কিছুক্ষণ মাপামাপি করে বললাম, “দিন কয়েকের মধ্যে তােমার পেটে কোনাে গণ্ডগােল হয়েছে, এই পেট খারাপের মতাে কিছু?” প্রবীর সাহা উৎসুক চোখে বলল, “হ্যা, সত্যিই তাই।” আমার এই সঠিক বলতে পারার পেছনে অলৌকিকত্ব বা হাত দেখার কোনও ব্যাপারই ছিল না। স্নায়ুদুর্বলতার দরুন কয়েকটা রাত ভাল ঘুম না হলে পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। আর, এই সম্ভাবনাটুকুর কথাই আমি প্রশ্নের আকারে প্রকাশ করেছিলাম। আমার এই সামান্য মিলে যাওয়া কথাটাই আমার প্রতি প্রবীর সাহার বিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তুলল। এবার ওর ডান হাতের প্রায় অস্পষ্ট একটা রেখাকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বললাম, “আমার ওপর তােমার বিশ্বাস আছে তাে?” “নিশ্চয়। আর, সেই জন্যেই তাে বাধ্য হয়ে আপনাকে বিরক্ত করতে আসা।” জ্যোতিষশাস্ত্র কোনই বিজ্ঞানই নয়, একটি অপবিজ্ঞান, এই কথাটা যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে এখন প্রবীরকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা বৃথা। ওর বর্তমান মানসিক অবস্থা যুক্তি বিচারের পর্যায়ে নেই। এই মানসিক অবস্থার কোনও মানুষকে তার অন্ধ বিশ্বাসের মূলে আঘাত করার মত বােকামি প্রায় কোনও মানসিক চিকিৎসকই করবেন না। সাময়িকভাবে ওর জ্যোতিষ বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই ওকেই বাঁচাতে চাইলাম। অর্থাৎ সেই প্লাসিবাে চিকিৎসা। এবার কণ্ঠস্বরে যথাসম্ভব আত্মবিশ্বাসের সুর মিশিয়ে বললাম, “তােমার জ্যোতিষ বিচার করতে গিয়ে সকলেই এক জায়গায় মারাত্মক রকমের ভুল করেছেন। আমি তােমাকে বলছি, তুমি বাঁচবেই। তােমার কিছুই হবে না। এই ছােট্ট রেখাটা বলে দিচ্ছে, একটা কিছু ঘটার যে সম্ভাবনা ছিল, তা কেটে গেছে। তােমার জীবনের সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি, তােমার কিছুই হবে না। তবে তােমাকে একটা জিনিস