পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২১

নতুন ‘কিছু কথা’


 ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ ১ম খণ্ডের প্রথম প্রকাশ ২১ বছরে পা দিল। প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে টানা ২১ বছর আনন্দবাজার পত্রিকা’র ‘বেস্ট সেলার’ তালিকায় স্থান পেয়েই আসছে। মনেই হতে পারে ‘অসম্ভব ব্যাপার’, কিন্তু ‘সত্যি’।

 আরও একটা ব্যাপার—‘যুক্তিবাদী সমিতি’-ও (ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি) ২১ বছরে পা দিল। ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ আর ‘যুক্তিবাদী সমিতি’ এই দুটি ‘ব্র্যাণ্ড নেম’ আজ সমার্থক শব্দ হয়ে গেছে।

 বুজরুকি ফাঁস নিয়ে লেখার শুরু ১৯৮২ সালে। ‘পরিবর্তন’ সেই সময় জনপ্রিয়তম বাংলা সাপ্তাহিক। সম্পাদক ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ‘লৌকিক অলৌকিক’ শিরোনামে লিখতাম বিভিন্ন তথাকথিত অলৌকিক ঘটনার নেপথ্যের লৌকিক কারণ। পাঠকরা যে ভাবে লেখাগুলো গ্রহণ করলেন, তাতে সত্যিই আপ্লুত হলাম।

 আমার এই ধরনের লেখায় হাত দেওয়ার পিছনে কয়েকটা কারণ ছিল। সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম, এ-দেশের অসাম্যের জগদ্দল ব্যবস্থাকে বাস্তবিকই পাল্টাতে হলে সমাজের কিছু মানুষের আন্তরিক সমর্থনের প্রয়োজন। আইন করে আজও জ্যোতিষচর্চা, ধর্মের নামে পশু বলি, দেহব্যবসা, পণপ্রথা ইত্যাদি বন্ধ করা যায়নি জন-সচেতনতার অভাবে। আবার আগে সমস্ত মানুষের বিবেকের পরিবর্তন ঘটাব, তারপর সমাজ বিপ্লব ঘটাবার কাজে হাত দেব—এটাও অত্যন্ত ভুল ধারণা। হাতের সামনেই উদাহরণ রয়েছে। গত শতকের শেষভাগে রাশিয়ায় যখন প্রতিবিপ্লব ঘটল, মার্কসের মূর্তিকে উপড়ে ফেলল, তখন গোটা ‘অপারেশন’-এ কত মানুষ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল? অতি মুষ্টিমেয়। কোনও প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, গৃহযুদ্ধ ছাড়াই তারা হঠাৎ করে কমিউনিস্ট জমানা পাল্টে দিল। রাশিয়ার সামান্য কিছু মানুষ পুরো ‘অ্যাকশন’-এ নেতৃত্ব দিয়েছিল। নেতারা বুঝে নিয়েছিল, তাদের এই পাল্টে দেবার রাজনীতিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা কেউ-ই প্রায় করবে না। কমিউনিস্টদের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ধারণা, মন্দির-মসজিদ গির্জায় জোর করে প্রার্থনা বন্ধ করে দেওয়া, উঁচু মহলে দুর্নীতি—এসবই সাধারণ মানুষের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। জনগণের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ছিল। বার-ড্যান্স, ক্যাবারে, ব্লু-ফিলম, বেশ্যাবৃত্তি ইত্যাদি নানা ভোগসর্বস্বতা রুশ সমাজে ঢুকে