পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৮৩
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
১৮৩

পীঠস্থান ও স্থান মাহাত্ম রহস্য ১৮৩ যার ওপর থাকত তাকে বলা হতাে সেনাধ্যক্ষ। তেমনি দেবস্থান অর্থাৎ মন্দির এবং পুরােহিত ও পণ্ডিতদের দেখাশুননার দায়িত্ব যার ওপর থাকত তাকে বলা হতাে দেবতাধ্যক্ষ। এই দেবতাধ্যক্ষ কাজ চালাতাে তার অধীন পণ্ডিতকুল ও পুরােহিতকুলের সাহায্যে। | ওই গ্রন্থের ৯০তম প্রকরণে আরও বলা হয়েছে, “দেবতাধ্যক্ষ ইহাও প্রচার করিতে পারেন যে, উপবনে একটি বৃক্ষ অকালে পুষ্প ও ফলযুক্ত হইয়াছে এবং ইহা হইতেই সেখানে দেবতার আগমন নিশ্চিত হইয়াছে।” | “সিদ্ধপুরুষের বেশধারী গুপ্তচরেরা কোন বৃক্ষে প্রতিদিন এক-একটি মানুষ ভক্ষণার্থ কররূপে দিতে হইবে তা জানাতে। এই মর্মে রাক্ষসের ভয় উৎপাদন করিয়া পৌর ও জনপদজন হইতে বহু টাকা লইয়া সেই ভয়ের প্রতিকার করিবে। রাক্ষস-ভয়ে স্ব-জীবনার্থ প্রদত্ত টাকা রাজাকে গােপনে অৰ্পণ করিবে।” অর্থাৎ, প্রজাদের শােষণ করার জন্য চাণক্য শুধু দেবতাদেরই সৃষ্টির কথা বলেননি, ভূত বা রাক্ষস সৃষ্টির কথাও বলেছেন। রাক্ষসের ভয় দেখিয়ে তারপর রাক্ষস তাড়াবার নাম করে অর্থ আদায়ের এই পন্থা বাইশশশা বছর পরে আজও তেমনই রয়েছে। আজও ভারতের বহু প্রান্তে ভূত ধরা ও ভূত তাড়ানাের নানা অলৌকিক (?) খেলা সমানে চলেছে। ৫ম অধিকরণ, ২য় অধ্যায়ের ৯০ তম প্রকরণে আরও রয়েছে, “দেবতাধ্যক্ষ দুর্গের ও রাষ্ট্রের দেবতাগণের ধন যথাযথভাবে একস্থানে একত্রিত রাখিবেন এবং সেইভাবে রাজাকে আনিয়া দিবেন।” ধর্মের নামে সুন্দর ব্যবসা ফেঁদে বসাতে হবে এবং সাধারণকে দোহন করে রাজকোষ বাড়াতে হবে। রাজকোষ বাড়াবার জন্যে ধনীদের স্বার্থরক্ষার জন্যেই চাণক্য পুরােহিতদের কাজে লাগাবার কথা উল্লেখ করেছেন। একালের মতােই সেকালেও কিছু যুক্তিবাদী লােক ছিলেন, যাঁরা সকলেই যা মেনে নিয়েছে তাই সত্য এই যুক্তিতে বিশ্বাস করতেন না। বিশ্বাস করতেন না, রাজা, পুরােহিত বা প্রতিষ্ঠিত পণ্ডিতরা মেনে নিয়েছেন বলেই কোন কিছুকে যুক্তি দিয়ে বিচার না করেই মেনে দিতে হবে। তারা সর্বযুগের যুক্তিবাদীদের মতাে সব কিছুকেই যুক্তি দিয়ে বিচার করতেন এবং তারপরই সেটা মেনে নিতেন অথবা বর্জন করতেন। এই সব যুক্তিবাদীরা শাসক, পুরােহিত, পণ্ডিতসমাজ ও ধনীদের পক্ষে ছিলেন যথেষ্টই বিপজ্জনক। মানুষকে দুর্বল, অসহায় ও ঈশ্বর-নির্ভর করে তােলার পক্ষে এই সব ঈশ্বরে শ্রদ্ধাহীন যুক্তিবাদী বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন যথেষ্ট বাধা স্বরূপ। এঁদের সম্বন্ধে চাণক্যের উপদেশ হলাে, “যাহারা অশ্রদ্ধালু, বেশি জিজ্ঞাসু, তাহাদিগকে ভােজন ও স্নানাদি-দ্রব্যে স্বল্পমাত্রায় বিষ প্রয়ােগ করিয়া মারিয়া ফেলিবে। তারপর ইহা দেবতার অভিশাপ' বলিয়া প্রচার করিবে।” প্রধানত রাজা-রাজড়াদের পৃষ্ঠপােষকতাতেই গড়ে উঠেছিল সেকালের বিখ্যাত