পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১৮৮
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
১৮৮

১৮৮ অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) ভিড় সবচেয়ে বেশি। লক্ষ লক্ষ ভক্ত মা দুর্গার উদ্দেশে নর্মদাতেই ছুঁড়ে দিচ্ছে ফুল, ফল বা মিঠাই। লক্ষ লক্ষ ধর্মপাগলকে সামলাতে শহরের পুলিশ হিমশিম খেয়ে গেল। এইসঙ্গে ব্যাপক হারে বিক্রি হতে লাগল অলৌকিক মা দুর্গার ফোটোগ্রাফ। এমন জীবন্ত দুর্গার ছবি বাড়িতে থাকলে দুর্গতি দূর হবে এই বিশ্বাসে বহু ভক্তই মা দুর্গার ফোটোগ্রাফ কিনল। বলতে গেলে ফোটো কেনার হুজুগ পড়ে গেল ওখানে। জব্বলপুরের হিন্দি দৈনিক পত্রিকা নবভারত’-এর দেওয়া তথ্য অনুসারে ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর মাত্র চার দিনেই জব্বলপুরের মতাে একটি মাঝারি শহরে ছবি বিক্রি হলাে ৪ থেকে ৫ লক্ষ। দাম হিসেবে জনসাধারণের পকেট থেকে চলে গিয়েছিল ৩৫ লক্ষ টাকার মতাে। সেই সঙ্গে দেবী দুর্গার কৃপায় অন্যান্য দোকানেরও বিক্রি-বাটার রমরমা ছিল দেখার মতাে। স্থান-মাহাত্মের স্থায়ী রূপ দিয়ে এই জায়গাটাকে একটা তীর্থক্ষেত্র বানিয়ে ফেলতে পারলে আখেরে যে প্রচুর লাভ হবে এটুকু বুঝে নিয়েছিল স্বার্থসংশ্লিষ্ট লােকেরা। এরই মধ্যে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। দুই উৎসাহী যুবক গাঞ্জীপুরার রামকিষণ সাহু ও অজয় বৰ্মন দেবীপ্রতিমাকে স্পর্শ করতে সাঁতার কেটে এগােতে গিয়ে নর্মদার তীব্র স্রোতে ভেসে গেল। দুই তরুণের এই মৃত্যুতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন চিন্তিত হলেন। বুঝলেন, দেবীপ্রতিমা পাথরের খাঁজে যতদিন আটকে থাকবে, ততদিনই আরও দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েই যাবে। ধর্মান্ধ লােকেরা জাগ্রত দুর্গাকে স্পর্শ করতে গিয়ে মৃত্যু হলে অক্ষয় স্বর্গবাস হবে বলে যদি একবার ধরে নেয়, তবে বিপর্যয় ঘটে যাবে। গণহিস্টিরিয়ার প্রকোপে স্বর্গবাসের বাসনায় অনেকেই আত্মাহুতি দেবে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিলেন প্রতিমা ডুবিয়ে দেবেন। | এইবার বােধহয় জব্বলপুরের ভেড়াঘাট সম্বন্ধে কিছু বলা প্রয়ােজন। ভেড়াঘাট জব্বলপুরের বিখ্যাত দ্রষ্টব্য স্থান। ভেড়াঘাটে এলে দেখতে পাবেন বিশ্ববিখ্যাত মার্বেল রক’-এর অসাধারণ শােভা। দুপাশে সাদা মার্বেল পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে নর্মদা নদী। নদীতে বােটে চেপে পর্যটকেরা পাহাড়ের সৌন্দর্য পান করেন। এখানকার প্রাকৃতিক গঠন বৈশিষ্ট্যের জন্য নদীর বাঁ-দিক বেশ গভীর, কোথাও কোথাও এই গভীরতা তিন চারশাে ফুট পর্যন্ত। স্বভাবতই গভীরতার দরুন নদীর বাঁ দিকের জল শান্ত ও স্রোত কম। ডান দিকে নদীর গভীরতা খুবই কম। এত কম যে, কোথাও কোথাও জলের উপর পাথরও চোখে পড়ে। জলের দু-চার ফুট গভীরতার মধ্যে রয়েছে বহু পাথর ও পাথরের তৈরি খাঁজ। তাই ডান দিকে নদীর স্রোত খুব তীব্র। বাঁ-দিকে বেশি জলে বিসর্জন দেওয়ায় ডুবে গিয়েছিল বটে কিন্তু ডুবন্ত অবস্থায় স্রোতের টানে ডান দিকে চলে যায় এবং প্রতিমার পাটাতন আটকে যায় কোন ডুবন্ত পাথরের খাঁজে। জলের তীব্র ধাক্কায় আটকে থাকা প্রতিমা সােজা দাঁড়িয়ে