পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

বহু বিজ্ঞানী। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। এই বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য অনুসন্ধান কর্মসূচীর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘পলিমোড’ প্রোগ্রাম।

 পলিমোড প্রোগ্রাম থেকে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে জানা গেছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী ও বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল অঞ্চল দিয়ে জাহাজ চলাচল করে বছরে প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার। প্রতি বছর ওই সব জাহাজ থেকে গড়ে দশ হাজার সাহায্য-বার্তা পাঠানো হয়। সেই অনুপাতে ওই অঞ্চলে নিখোঁজ জাহাজের সংখ্যা বিস্ময়করভাবে কম। অনুসন্ধানকারী সংস্থা আরও জানিয়েছে পৃথিবীতে প্রতি বছর দু-তিনটি বড় জাহাজ নিখোঁজ হয়। কয়েক বছরের হিসেব নিয়ে অনুসন্ধানকারীরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, যে-সব অঞ্চলে জাহাজ চলাচল অত্যন্ত বেশি সেইসব অঞ্চলের তুলনায় বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেলে জাহাজ ডুবির সংখ্যা মোটেই বেশি নয়। যে-সব বিমান সংস্থার বিমান এই অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করে সে-সব বিমান সংস্থার গত বারো বছরের রেকর্ড পরীক্ষা করে অনুসন্ধানকারীরা দেখেছেন, এই বারো বছরের মধ্যে তাদের কারোরই কোনও বিমানই বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেলে নিখোঁজ হয়নি।

 ‘বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল’ বইটির একটি অতি উত্তেজক রহস্য-কাহিনি হল ১৯৬৩ সালে দুটি ‘কে. সি. জেট স্ট্রাটোট্যাংকার’ বিমানের রহস্যময় অদৃশ্য কাহিনি। লেখক বার্লিৎজ লিখেছেন, বিমান হঠাৎই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় এবং অনুসন্ধানের পর বিমান দুটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয় একশো মাইল ব্যবধানে। কী করে এরা ধ্বংস হল? সংঘর্ষে? সংঘর্ষেই যদি হবে, তবে দুটি বিমানের ধ্বংসাবশেষ একই জায়গায় পাওয়া গেল না কেন? কী সেই রহস্যময় কারণ, যার দরুন দুটি বিমান সংঘর্ষ ছাড়া ধ্বংস হল?

 এতো গেল বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল বইয়ের কথা। আসুন, এবার আমরা দেখি, অনুসন্ধানকারীদের অনুসন্ধানে কী সত্য উঠে এলো।

 অনুসন্ধানকারীরা যে তথ্য পেয়েছিলেন তা হলো (১) দুটি বিমানের ধ্বংসাবশেষ একই জায়গায় পাওয়া গিয়েছিল। (২) সে-দিনের আবহাওয়া ছিল দুর্যোগপূর্ণ। (৩) দুটো বিমান খুব কাছাকাছি, পাশাপাশি উড়ছিল।

 দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে পাশাপাশি উড়তে গিয়ে সংঘর্ষ হয়েছিল বলে সরকারি রিপোের্টও উল্লেখ আছে। অনুসন্ধানকারীরা সেই রিপোের্ট দেখেছেন। সব কিছু বিচার করার পর এ-টুকু অবশ্যই বলা যায় যে, ঘটনাটির মধ্যে কোনও অলৌকিকতার ছোঁয়া ছিল না। বার্লিৎজ তাঁর লেখায় রহস্যময়তা আনার জন্যেই মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন। স্বেচ্ছাকৃতভাবেই তিনি কিছু তথ্য পরিবেশনে বিরত ছিলেন এবং কিছু মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করেছিলেন।

 ‘বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল’ বইয়ের আর একটি ঘটনায় বলা হয়েছে, ১৯৭৬-এর