১৯৫৯ সালে বিখ্যাত পরামনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডঃ জে. বি. রাইন টেলিপ্যাথির সফল পরীক্ষা (?) চালিয়ে সবচেয়ে সারা বিশ্বে দস্তুরমতো একটা ঝড় তুলেছিলেন। তাঁর পরীক্ষার এই অভাবনীয় সাফল্যের খবর বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমগুলোর দ্বারা প্রচারিত হতেই বিভিন্ন দেশের পরামনোবিজ্ঞানীরা নতুন শক্তি পেলেন। এলো পরামনোবিদ্যা বা Parapsychology-র জোয়ার। টেলিপ্যাথির সপক্ষে তাঁরা প্রত্যেকেই হাজির করতে লাগলেন ডঃ রাইনের ন্যাটিলাশ ডুবোজাহাজে চালানো সফল পরীক্ষার খবর।
ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
ডঃ জে. বি. রাইন দাবি করেন, ১৯৫৯ সালের ২৫ জুলাই তিনি টেলিপ্যাথির সাহায্যে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ‘ন্যাটিলাশ’-এ খবর পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। পরীক্ষা চালাবার সময় ন্যাটিলাশ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১২০০ মাইল দুরে এবং জলের তলায়। এই পরীক্ষায় অন্যতম পরীক্ষক ছিলেন মার্কিন বিমান বাহিনীর উইলিয়ম বাওয়ার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তাঁর এই দাবিগুলোকে প্রচার করে। প্রচার মাধ্যমগুলো ডঃ রাইনের দাবির সত্যতার অনুসন্ধানে সময় নষ্ট না করে পড়িমরি করে সাধারণ মানুষকে গপ্পোটা গেলাবার জন্যে উঠে পড়ে লাগলো। একটা মানুষের মনে একটা ভুল ধারণার সৃষ্টি করল। প্রচার মাধ্যমগুলো যে নিজেদের ব্যবসা দেখতে গিয়ে লক্ষ-কোটি লোকের মধ্যে অবৈজ্ঞানিক চিন্তা ও যুক্তিহীন কুসংস্কারের বীজ বপন করল।
এই অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটার চার বছর পরে অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ‘দিস উইক’ পত্রিকার তরফ থেকে ঘটনাটির ওপর একটি বিশেষ অনুসন্ধান চালানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল টেলিপ্যাথি পরীক্ষাটির ওপর একটি বিশেষ প্রবন্ধ প্রকাশ করা। আর, তাইতেই বেরিয়ে আসে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’। ন্যাটিলাশ আণবিক সাবমেরিনের ক্যাপ্টেন উইলিয়ম অ্যাণ্ডারসন জানান ১৯৫৯-এর ২৫ জুলাই ন্যাটিলাশ ছিল ডকে। কিছু সারাইয়ের কাজ চলছিল। ক্যাপ্টেন উইলিয়ম পরিস্কার ভাবে এও জানান যে, আজ পর্যন্ত টেলিপ্যাথির কোনও পরীক্ষাই ন্যাটিলাশে চালানো হয়নি।
টেলিপ্যাথির পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত বলে কথিত মার্কিন বিমান বাহিনীর উইলিয়ম বাওয়ার পত্রিকার অনুসন্ধানকারীদের জানান—টেলিপ্যাথির কোনও পরীক্ষার সঙ্গেই তিনি যুক্ত ছিলেন না। ১৯৫৯-এর ২৫ জুলাই তিনি আদৌ ন্যাটিলাশে ছিলেন। ছিলেন আলাবামা বিমান বাহিনীর বিশ্ববিদ্যালয়ে।