পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৯৬
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
২৯৬

________________

অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) স্বামী অভেদানন্দ ও স্বামী প্রজ্ঞানন্দের এই কথাগুলাে থেকে যে কটা জিনিস স্পষ্টভাবে বেরিয়ে আসে, তা হলাে- (১) আত্মাই মন, মনই আত্মা। (২) মন মস্তিষ্কের বহির্ভূত পদার্থ, মস্তিষ্ক জাত নয়। (৩) মনের অস্তিত্ব স্বীকার করা মানেই আত্মার অস্তিত্বকে স্বীকার করা। (৪) পরলােকবাসী আত্মাদের মস্তিষ্ক বলে কোনও পদার্থ না থাকলেও, তারা পরলােকজরাজ্যে সূক্ষ্মভাবনা ও সুক্ষ্ম-চিন্তা করে। দুই স্বামীজির লেখা পড়ে বুঝতে অসুবিধে হয় না, মন' বিষয়ে তাদের প্রাথমিক জ্ঞানটুকু নেই। সবার সব বিষয়ে জ্ঞান থাকা কখনই সম্ভব নয়, এই সত্যকে মেনে নিয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি—‘বৈজ্ঞানিক আলােচনার লেবেল এঁটে সাধারণের সামনে এই ধরনের ভুল ও অসত্য কথা লেখা খুবই অন্যায়। | ‘মন বিষয়ে আলােচনা করার আগে দুই স্বামীজি যে কোনও চিকিৎসকে জিজ্ঞেস করলেই বা মনােবিজ্ঞানের বই পড়লেই জানতে পারতেন—মন কোনও জিনিস’ নয়, মন বা চিন্তা হলাে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফল। তাই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করলেও মনকে দেখতে পাওয়া যায় না। তবে দেখতে পাওয়া যায় মস্তিষ্কের কোষগুলােকে, যাদের সংখ্যা দশ লক্ষ কোটি। | ‘মন’ বা ‘চিন্তা যেহেতু মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষগুলাের ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফল, অতএব মনকে ‘মস্তিষ্ক বহির্ভূত পদার্থ’ বা ‘মস্তিষ্কজাত নয়’ বললে তা হবে চুড়ান্ত মুখর্তা। মনের অস্তিত্বকে বিজ্ঞানী ও মনােবিজ্ঞানীরা কখনই অস্বীকার করছেন না। কিন্তু মনের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেওয়া মানেই অমর আত্মার অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেওয়া বলে যদি স্বামীজি দু’জন মনে করে থাকেন, তবে তা হবে তাদেরই অজ্ঞতার পরিচয়। কারণ, বিজ্ঞান মনের অস্তিত্ব বলতে একটা কুয়াশার মতাে বাষ্পময় কোন পদার্থকে বােঝে না। স্বামীজিদের ধারণা মতাে আত্মার চিন্তা-ভাবনার ক্ষমতা আছে। অথচ, বিজ্ঞানের সাহায্যে বা সাধারণ যুক্তিতে এর ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না। মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ ছাড়া চিন্তা বা মনের অস্তিত্ব অসম্ভব এবং অবাস্তব, কারণ চিন্তা বা মনের উৎপত্তি মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষগুলাের ক্রিয়ারই ফল। এ-শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই নয়, পােকা-মাকড়, পিপড়ে বা আরশােলা, সবার চিন্তা বা মনের ক্ষেত্রেই রয়েছে স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া। প্রাণীদের মধ্যে মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের কাজ সবেচেয় উন্নত, তাই তার চিন্তা ক্ষমতাও সবচেয়ে বেশি। মস্তিষ্ক, স্নায়ুকোষহীন যে বাষ্পময় আত্মার ধারণা স্বামীজিরা করেছেন, সেই আত্মা যুক্তিগতভাবে কখনই চিন্তা করতে সক্ষম হতে পারে না। এই ধরনের ধারণা একান্তই অবৈজ্ঞানিক, অলীক ও যুক্তিহীন। | বিদেহী আত্মা কীভাবে আবার দেহ ধারণ করে সে বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ যে বৈজ্ঞানিক আলােচনা করেছেন তা আপনাদের অবগতির জন্য তুলে দিচ্ছি। ‘মন’ বা ‘আত্মা” “আকাশের মধ্যে দিয়ে বায়ুতে প্রবেশ করে, বায়ু থেকে মেঘ, সেখান থেকে বৃষ্টির বিন্দুর সঙ্গে তারা পড়ে ধরণীতে, তারপর কোন খাদ্যের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করে আবার তারা জন্ম নেয়।” (পৃষ্ঠা-৩৮)