পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩১০
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

বিজ্ঞানসম্মতভাবে আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি, প্রমাণিত হবেও না। আত্মার অস্তিত্বই যখন নেই, তখন আত্মার পুনর্জন্ম আসছে কোথা থেকে?

ধরা গেল, কোনও ব্যক্তিকে সম্মােহিত করে তার মধ্যে যদি এই ধারণা সঞ্চারিত করা যায় যে, তিনি গতজন্মে রামবাবু ছিলেন। একুশ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন শ্যামাসুন্দরীকে। থাকতেন শ্যামপুকুরে। দুই ছেলে ও এক মেয়ের নাম ছিল যথাক্রমে হলধর, গুণধর ও লক্ষ্মী। চাকরি করতেন কলকাতা পুলিশে। একবার হাত ভেঙেছিল, আর একবার নাক। লক্ষ্মীর জন্মের পর একটা প্রমােশন পেয়েছিলেন একান্ন বছর বয়সে। প্রাণ গিয়েছিল ডাকাতের গুলিতে।

এইবার কিছু সাক্ষী-সাবুদের সামনে লােকটিকে আবার সম্মােহিত করে তার গত জন্মের বিষয় জানতে চাইলে তিনি মস্তিষ্কে সঞ্চারিত রামবাবুর কথাই বলে যাবেন।

ধরে নিলাম সম্মােহন করতে জানেন। তিনি যদি জাতিস্মরতা প্রমাণে জন্য কোনও মৃত ব্যক্তির বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে কোনও সম্মােহিত ব্যক্তির মস্তিষ্কে সাজেশন’ পাঠিয়ে তথ্যগুলাে সঞ্চারিত করলেন। পরবর্তীকালে লােকটিকে সম্মােহিত করে সঞ্চারিত তথ্যগুলােতেই আবার বলিয়ে নিতেই পারেন। সুতরাং, এখানে একটা বিরাট ফকির সুযােগ থেকেই যাচ্ছে। সম্মােহনের সাহায্যে একজনকে জাতিস্মর বলে হাজির করার ফঁাকি।

সাধারণত দু-ধরনের জাতিস্মর দেখা যায়। এক: মানসিক রােগী। দুই: প্রতারক। সম্মােহন করে একজনের মস্তিষ্কে কোনও মৃতব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন ঘটনার তথ্যাদি ঢুকিয়ে না দিলেও দেখা যায় কিছু কিছু মানুষ হঠাৎ দাবি করেন, তাঁর পূর্বজন্মের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা চালালে দেখা যাবে তথাকথিত পূর্বজন্মের মানুষটির জীবনের অনেক তথ্যই সত্য। এর কারণ ভূতে পাওয়া বা ঈশ্বরের ভরের মতই জাতিস্মর একটা মানসিক রােগমাত্র। সাধারণভাবে জাতিস্মরের দাবিদার মানসিক রােগীর অল্পবয়স্ক, কল্পনাপ্রবণ এবং আবেগপ্রবণ | এঁদের মস্তিষ্ককোষের স্থিতিস্থাপকতা বা সহনশীলতা এবং যুক্তি দিয়ে বিচার করার ক্ষমতা কম। সামাজিক, পারিবারিক ও পরিবেশগত কারণে পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। কোনও একজনের মৃত্যু ঘটনা তাঁদের বিশেষভাবে নাড়া দেয়। ঐ মৃতব্যক্তি ও তার বাড়ি, পরিবেশ, পরিবার, শৈশব, কর্মক্ষেত্র, পােশাক, মুদ্রাদোষ ইত্যাদি বিষয়ে একনাগাড়ে ভাবতে থাকলে, বিশেষ কিছু মস্তিষ্ককোষ বারবার উত্তেজিত হতে থাকে। এর ফলে অনেকসময় মস্তিষ্ককোষে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। তখন সে বিশ্বাস করে ফেলে আমিই ওই মৃত ব্যক্তি ছিলাম। এই সময় তথাকথিত জাতিস্মরের মা-বাবা যদি ভ্রান্ত ধারণার শিকার না হয়ে মনােরােগ চিকিৎসকের সাহায্য নেন, তবে রােগী তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।

আবার অনেকসময় সন্তানকে বিখ্যাত করার তাগিদে অথবা কোনও ধনীর সম্পত্তির লােভে কিবা ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছায় প্রমাণ করতে চান তাদের সন্তান বাস্তবিকই জাতিস্মর। বিখ্যাত হবার জন্য মা-বাবাই মৃতের তথ্য জেনে সন্তানকে সমস্ত তথ্য দিয়ে তাকে জাতিস্মরের ভূমিকায় অভিনয় করান।