পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৩৯
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
৩৩৯

________________

প্ল্যানচেট (Planchette) বা প্রেত বৈঠক দর্শকদের একটা বদ্ধমূল ধারণা আছে, হাতকড়ি বা পায়ের বেড়ি খােলার চাবি ব্যাঙ্ক-লকারের মতনই আর দ্বিতীয় হয় না। না, তা নয়। সব হাতকড়ি আর পায়ের বেড়ির চাবি একই। দু’জোড়া কিনলেই হাতে চলে আসে একটা অতিরিক্ত চাবি। এই অতিরিক্ত চাবিই জাদুকর নিজের হাতকড়ি খুলতে কাজে লাগান। যে বস্তায় বন্ধ করা হয়, সেই বস্তার তলায় এমন ধরনের সেলাই দেওয়া থাকে যাতে বস্তাবন্দী জাদুকর বস্তার ভেতরে হাত বুলােলেই সেলাই চটপট খুলে যায়। | জাদুকরের পােশাকের আড়ালে থাকে একট মুখ-বাঁধা বস্তা। সেলাই-খােলা বস্তাটি পােশাকের আড়ালে লুকিয়ে নিয়ে বাক্সে ফেলে রাখেন মুখ-বাঁধা বস্তাটা। এবার বাকি শুধু কাঠের সিন্ধুক থেকে বেরিয়ে আসা। এতটা শােনার পর বুদ্ধিমান পাঠক-পাঠিকারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন বাক্সে কোনও একটা গােপন দরজা থাকে, তবে সাধারণ চোখে এই দরজার অস্তিত্ব বােঝা বা খােলা সম্ভব হয় না। দেখলেন তাে, এতক্ষণ বিখ্যাত সব জাদুকরদের যে-সব খেলাগুলাের কথা শুনে বিস্মিত হয়ে ভাবছিলেন, সত্যিই কী এগুলাে লৌকিক কৌশলে করা সম্ভব? সেগুলােরই মূল কৌশলটা কত সােজা। এই কৌশলই একটু অদল-বদল করে বিভিন্ন জাদুকররা বন্ধন-মুক্তির খেলা দেখান, আর ঠকবাজেরা লােক ঠকায়। রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা আমাকে মাঝে-মধ্যে বহু পরিচিতজনের কাছেই একটা প্রশ্নের মুখােমুখি হতে হয়েছে—রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেখায় উল্লেখ পাই, তিনি প্ল্যানচেটের সাহায্যে তার প্রিয়জনের বিদেহী আত্মাদের নিয়ে এসেছিলেন। বিদেহী আত্মারা লিখিত উত্তরও রেখে গেছেন। এরপরও কী বলবেন? রবীন্দ্রনাথের সব কথা মিথ্যে? রবীন্দ্রনাথ বাঙালি তথা ভারতীয়দের কাছে অতি স্পর্শকাতর বিষয়। তবু এই সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রায় ক্ষেত্রেই বাঙালিরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যতটা গর্ব করেন ততটা রবীন্দ্রনাথকে জানার, তাঁর রচনা পড়ার চেষ্টা করেন না। রবীন্দ্রনাথ তাদের কাছে অনেকটাই গান, গীতিনাট্য ও বইয়ের তাকের শােভা বর্ধনে আবদ্ধ। যারা রবীন্দ্রনাথের পরলোেকচর্চা বিষয়ে এই ধরনের প্রশ্ন তােলেন, তারা নিজেরা যদি রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট করার বিষয়ে কিছুটা পড়াশুনাে করে নিতেন তবে ঠিক এই ধরনের প্রশ্ন আদৌ করতেন না। | রবীন্দ্রনাথের পরলােকচর্চার পেছনে ছিল অজানাকে জানার কৌতূহল।কিন্তু তিনি এই বিষয়ে অন্ধবিশ্বাসী ছিলেন না। রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখােপাধ্যায়ের লেখা রবীন্দ্র-জীবনী গ্রন্থ থেকে জানতে পারি—“রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং প্ল্যানচেট লইয়া বহুবার পরীক্ষা করিয়াছেন। কখনও কৌতুকছলে, কখনও কৌতুহলবশে।”