পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রস্তাবনা)
৪৩
ব্রুনো

 সে-যুগের শিক্ষাক্ষেত্রেও ছিল প্রচণ্ড ধর্মীয় প্রভাব। ধর্মীয় বিশ্বাসকেই অভ্রান্ত বলে মেনে নিয়ে শিক্ষা দেওয়া হতো। সাধারণের মধ্যেও ধর্মান্ধতা ছিল গভীর ও ব্যাপ্ত। বাইবেল-বিরোধী মত প্রকাশের জন্য মহামান্য পোপ ক্ষিপ্ত হলেন, ক্ষিপ্ত হলো ধর্মর্যাজক ও ধর্মান্ধ মানুষগুলো। ব্রুনো বন্দি হলেন। ধর্ম-বিরোধী মত পোষণের অপরাধে ব্রুনোকে আটকে রাখা হয়েছিল এমন এক ঘরে, যার ছাদ ছিল সীসেতে মোড়া। গ্রীষ্মে ঘর হতো চুল্লি, শীতে বরফ। এমনি করে দীর্ঘ আট বছর ধরে তার উপর চলেছে ধর্মীয় নির্যাতন।

 ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র ঈশ্বর-প্রেমীরা তথাকথিত সত্যের পূজারিরা ব্রুনোকে শেষবারের মতো তাঁর মতবাদকে ভ্রান্ত বলে স্বীকার করতে বলল। অসীম সাহসী ব্রুনো সেই প্রস্তাব প্রচণ্ড ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করলেন। বাইবেল বিরোধী অসত্য ভাষণের জন্য ব্রুনোকে প্রকাশ্য স্থানে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হলো। অনুমান করে নিতে অসুবিধে হয় না, সেদিনের দর্শক হিসেবে উপস্থিত মূর্খ জনতা লেলিহান আগুনে এক সত্যের পূজারিকে ধ্বংস হতে দেখে যথেষ্ট উল্লসিত হয়েছিল।

 গ্যালিলিও গ্যালিলেইকেও ধর্মান্ধদের বিচারে অধার্মিক ও অসত্য মতবাদ প্রচারের অপরাধে জীবনের শেষ আট বছর বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে।

 কিন্তু এত করেও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ও ঈশ্বরের পুত্রেরা সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর ঘোরা বন্ধ করতে পারেনি।

 খ্রিস্টজন্মের প্রায় ৪৫০ বছর আগে আনাক্সাগোরাস বলেছিলেন, চন্দ্রের নিজস্ব কোনও আলো নেই। সেইসঙ্গে আরও বলেছিলেন, চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধির কারণ। চন্দ্রগ্রহণের কারণও তিনি ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন।