পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৫০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
৫৩

জন্ম নেয় বহু অতিরঞ্জিত কাহিনি। যা
অনেক সময় বহু কথিত হওয়ার
ফলে আমরা বিশ্বাসও
করে ফেলি।

 এই সুযোগে ম্যাজিকের ওপর একটা গুল-গল্প শোনাই আপনাদের।

 এক বিখ্যাত ম্যাজিসিয়ানের ম্যাজিক দেখতে এসে দর্শকরা একটু একটু করে অধৈর্য হয়ে উঠছেন, শো’র সময় কখন পার হয়ে গেছে, অথচ তখনও ম্যাজিসিয়ানের দেখা নেই।

 অধৈর্য জনতা যখন ক্ষুব্ধ, সেই সময় মঞ্চের পরদা উঠল। জাদুকর হাসিমুখে এসে দাঁড়ালেন। কয়েকজন ক্ষুব্ধ দর্শক জাদুকরের কাছে দেরি করার কৈফিয়ত দাবি করতেই জাদুকর অবাক চোখে নিজের ঘড়ি দেখে বললেন, “এক মিনিটও তো দেরি করিনি।”

 যাঁদের হাতে ঘড়ি ছিল তাঁরা সকলেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে বোবা হয়ে গেলেন। প্রত্যেকের ঘড়িই একটু আগে দেখা সময় থেকে দেড় ঘণ্টা পিছিয়ে গেছে। এমন এক অসাধারণ খেলা দিয়ে ম্যাজিক শুরু হতে দেখে দর্শকরা প্রচণ্ড হাততালি দিয়ে অভিনন্দন করলেন জাদুকরকে।

 ম্যাজিক নিয়ে এই গণসম্মোহনের গল্পটা বহু প্রচলিত, মূল গল্পের কাঠামো প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক। যে জাদুকরদের নিয়ে এই ধরনের কিংবদন্তি বা আষাঢ়ে গল্প বিভিন্ন সময়ে দারুণভাবে চালু হয়েছিল, তাদের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় জাদুকর গণপতি, রাজা বোস, রয়-দি মিসটিক এবং জাদু সম্রাট পি সি সরকার। বিশ্বে যাঁকে নিয়ে এই আষাঢ়ে গল্প শুরু হয়েছিল তিনি এক মার্কিন জাদুকর হাউয়ার্ড থার্সটন।

 এই গণসম্মোহনের জাদু এঁরা কোনদিনই দেখাননি। কারণ, দেখানো সম্ভব নয়। অথচ, ভাবতে অবাক লাগে, আজও অনেকেই বিশ্বাস করেন এই বিস্ময়কর জাদুর খেলা বিভিন্ন জায়গায় দেখানো হয়েছে এবং অনেক প্রত্যক্ষদর্শী এখনও আছেন। দোষ এইসব বিশ্বাসকারীদের নয়। দোষ সেইসব আষাঢ়ে গল্পবাজদের, যাঁরা শোনা গল্পকে নিজের চোখে দেখা বলে চালিয়েছেন।

শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে।

 হাঁ, সেই কথাতেই আবার ফিরে আসি। আমাদের দেশে উদ্যাঁর মতো কোন একজনের বড় বেশি প্রয়োজন, যিনি অলৌকিকবাদের লৌকিক-কৌশলগুলো সাধারণ মানুষদের বুঝিয়ে দিয়ে কুসংস্কার ও অলৌকিকত্বের মায়াজাল থেকে জনগণকে মুক্ত করবেন। কারণ—অলৌকিক বাবাজি-মাতাজিদের ভিড় এবং জ্যোতিষীদের রমরমা আমাদের দেশে বড় বেশি। বারো মাসে তেরো পার্বণের