পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৯১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯৪
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)

 ধীরেনদারই একটা প্যাডে সঠিক উত্তর লিখেছিলাম। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে আমাকে লক্ষ্য করছিলেন এককালের কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের সর্বময়কর্তা সুবিমলবাবু।

 আমার লেখা শেষ হতেই কলমটা সরিয়ে রেখে বলেছিলাম, “উত্তর লেখা হয়ে গেছে। এবার আপনি বলুন তো, আপনারা ক’ ভাইবোন?”

 “আমি কেন বলব। আপনিই বলুন, “সুবিমলবাবু বলেছেন।

 “উত্তর তো লেখা হয়েই গেছে। আর পরিবর্তন করার কোনও সুযোগ নেই। এবার শুধু দেখার পালা, সঠিক উত্তর দিতে পেরেছি কী না।”

 সুবিমলবাবু আমার যুক্তি মেনে নিয়ে উত্তর দিলেন, “ছয়।”

 প্যাডটা মেলে ধরলাম, তাতেও লেখা হয়েছে—ছয়।

 সুবিমল দাশগুপ্ত অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে অবাক কণ্ঠে বললেন, “আশ্চর্য তো। আমার ক’জন ভাইবোন তা আপনার পক্ষে জানা অসম্ভব। সত্যি, আজ অদ্ভুত এক অলৌকিক-ক্ষমতা দেখলাম!”

 সুবিমলবাবুকে বললাম, “আপনি যেটাকে অলৌকিক বলে ভাবলেন, সেটা আদৌ কিন্তু কোন অলৌকিক ঘটনা নয়। এর পেছনে রয়েছে নেহাতই কৌশল।”

 “অসম্ভব। আমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। আপনি প্রমাণ করতে পারবেন, এটা কৌশল?” সুবিমলবাবু চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন আমাকে।

 কৌশলটা আরও অনেকের মতোই সুবিমলবাবুকেও শিখিয়ে দিলাম। প্যাডে সম্ভাব্য প্রতিটি উত্তরই লিখে রাখি। তারপর প্রশ্নকর্তার কাছ থেকেই উত্তর শুনে নিয়ে কাগজটা কায়দা মতো ভাঁজ করে, এবং ডান বা বা ঁহাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে উত্তর ছাড়া বাকি লেখাগুলো ঢেকে দিই। ফলে সকলে শুধু উত্তরটাই দেখেন। গৌরাঙ্গ ভারতীর মতোই পাগলাবাবা বারাণসীর ভক্তদের মধ্যেও রয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ও বিখ্যাত বহু ব্যক্তি।

 আরও অনেক অলৌকিক ক্ষমতাধরও (?) নিশ্চয়ই আছেন, যাঁরা লিখে উত্তর দিয়েই কাত করে দিচ্ছেন বহু জ্ঞানী-গুনীজনকে। এই বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই সুবিমল দাশগুপ্তের মতোই ঘটনার পেছনে নিজস্ব কোনও যুক্তি খাড়া করতে না পেরে ধরে নেন ঘটনাটা অলৌকিক।

সাধারণত আমরা যখন কোন অলৌকিক ঘটনা দেখি তখন সেই
ঘটনার পেছনে কোনও যুক্তি নিজেরা খাড়া করতে না পারলেই
ধরে নিই ঘটনাটা নিশ্চয়ই অলৌকিক। কখনই ভাবি না
যে, এই ঘটনার পেছনে অবশ্যই আমার অজানা
কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। এর কারণ
অহং বোধ। আমি কী আর
ভুল দেখেছি!