পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৯৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সাধুসন্তদের অলৌকিক ক্ষমতা
১০১

 তাঁরা ভেবে নিলেন অলৌকিক ক্ষমতায় বিনা অস্ত্রোপচারেই অ্যাপেণ্ডিক্স বদল হয়ে গেল। যিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এতো বড় একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারলেন, তিনি নিজের অ্যাপেণ্ডিক্সের সামান্য প্রদাহটুকু বন্ধ করতে পারলেন না, এটাই আমাকে আরও বেশি আশ্চর্য করেছে।

যিনি অন্যের রোগ সারাতে পারেন, তিনি কেন নিজের রোগ সারাতে
পারেন না? ভক্তদের মনের এই প্রশ্ন ও সংশয়ের নিরসনের
জন্যই বাবাজিদের এই সব রোগ গ্রহণের মতো
গালগল্পের আশ্রয় নিতে হয়।

 এর পরেও অবশ্য কেউ কেউ বলতে পারেন, অমুক সাধুর দেওয়া ওষুধে তাঁর অসুখ সেরেছে। আমি বলি, নিশ্চয়ই সারতে পারে। সাধু বলে কী তাঁর চিকিৎসা করার মত জ্ঞান থাকতে নেই? এর মধ্যে অলৌকিকত্ব কোথায়?

বিশ্বাসে অসুখ সারে

অনেক সময় ওষুধ ছাড়াই এই সব অবতারেরা অনেক রোগ নিরাময় করেন। অনেক সময় ওষুধ ছাড়াও রোগ কমে। সেইসব রোগ কমার কারণ অলৌকিকত্ব নয়। কারণ অনেক অসুখ আপনা-আপনি সারে। শরীরের রোগ প্রতিহত করার ক্ষমতায় সারে। এই অবসরে একটি ঘটনা বলি ১৯৮৭-র মে মাসের এক সন্ধ্যায় কলকাতার থেকে প্রকাশিত একটু সুপরিচিত পত্রিকার সম্পাদকের স্ত্রী এসেছিলেন আমার ফ্ল্যাটে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর পারিবারিক চিকিৎসক এক সাহিত্যিক-সাংবাদিক এবং জনৈক ভদ্রলোক।

 চিকিৎসক জানালেন বছর আড়াই আগে সম্পাদকের স্ত্রী ডান উরুতে একটা ফোড়া হয়েছিল। ছোট অস্ত্রোপচার, প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন ও ওষুধে ফোঁড়ার ক্ষত সম্পূর্ণভাবে সেরে যায়। কিন্তু এরপর ওই শুকিয়ে যাওয়া ক্ষতস্থান নিয়ে শুরু হয় এক নতুন সমস্যা। মাঝে-মাঝেই উরুর শুকিয়ে যাওয়া ক্ষত ও তার আশপাশে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কখনও ব্যথার তীব্রতায় রোগিণী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে যেসব চিকিৎসকদের দেখান হয়েছে ও পরামর্শ নেওয়া হয়েছে তাঁরা প্রত্যেকেই কলকাতার শীর্ষস্থানীয়। ব্যথার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ এঁরা খুঁজে পাননি। চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র, এক্স-রে ছবি ও রিপোর্ট সবই দেখালেন আমাকে।

 আমি পেশায় মানসিক চিকিৎসক না হলে মাঝে-মধ্যে এই ধরনের কিছু সমস্যা নিয়ে কেউ কেউ আমার কাছে হাজির হন। কাউন্সিলিং করি বা পরামর্শ দেই। রোগিণীর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে কথা বলতে বলতে উরুর শুকনো ক্ষতটা পরীক্ষা করে বললাম, “একবার খড়্গপুরে থাকতে দেখেছিলাম একটি লোকের হাতের বিষ-ফোড়া সেপটিক হয়ে, পরবর্তীকালে গ্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছিল।