পাতা:অশনি সংকেত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত ' ܬܠܬ -কেন আসবো না ? আমার সাধ ছিল পদ্মবিলের একেবারে ধারে একখানা ঘর। বো । --তোমার এ ঘরও তো বিলের ধারে বৌদি ? কত দর অ্যার ? ওই তো কাছেই । --তা না রে, বিলের একেবারে ধারে ওই যে বাঁশ ঝাড়টা ওয়ই পাশে ঘর বিধবার ইচ্ছে { । বেশ ভালো হোেত না ? -এখন বাঁধো। আমি বাঁশ, খড় সব জটিয়ে দেবো বাবাকে বলে । অনঙ্গ-বৌয়ের ঘােম এল না। অনেক রাত পযন্ত । সে ভাবছিল তার জীবনের গত দিনগলির কথা। ছতোরখালি গ্রামে তার বাপের । বাবা ছিলেন সামান্য অবস্থার গহন্থ, জমিজমার সামান্য আয়ে সংসার চালাতেন । হরপরে কি একটা কাজে গিয়ে গঙ্গাচরণের বাবার সঙ্গে আলাপ হয়-সেই সত্রে মেয়ের fর সম্প্রবন্ধ করেন। গঙ্গাচরণের সঙ্গে। কিন্তু বিবাহের কিছুদিন পবেই হঠাৎ তিনি মারা । মামাদের চেন্টায় ও গঙ্গাচরণের বাবায় দয়ায় হরিহরপরেই বিবাহ হয় । একখানা লালপাড় শাড়ী ও মায়ের হাতের সোনা-বাঁধানো শাঁখা-এর বেশি কিছঃ জোটে নি --বৌয়ের ভাগ্যে বিয়ের সময়ে । এদিকে বিয়ের কিছুদিন পরে গঙ্গাচরণের বাবাও মারা গেলেন । গঙ্গাচরণের জ্ঞাতিরা রকম শত্রতা করতে লাগলো । হরিহরপরে একখানা পরোনো কোঠাবাড়ী ও একটা বাগান ছাড়া অন্য কিছু আয়কর সম্পত্তি ছিল না, জ্ঞাতিদের শত্রতায় অবস্থা শেষে এমন লো যে আমবাগানের একটি আমিও ঘরে আসে না । কোনো অনায় ছিল না। সংসারের, নের মানকচু তুলে কামারগাঁতার হাটে নিজের মাথায় করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে চরণকে চাল কিনে আনতে হয়েচে, তবে স্বামী-স্ত্রীর সংসার চলেচে । একদিন খাব বর্ষার দিন । ফুটো ছাদ দিয়ে জল পড়ে ঘর ভেসে যাচ্চে, অনঙ্গ-বেী কে বললে-- হাগা, বাড়ীঘর না। সারালে এখানে তো আর থাকা যায় না ? গঙ্গাচরণ বললে--কি করি বো, বসন্ত মিস্ত্রিকে জিজ্ঞেস করি নি। ভাবচো ! অ্যানি বসে । দশোটি টাকার এক পয়সার কমে ও ছােদ উঠবে না । —কোথায় পাবে দশো টাকা ? দ'টাকার সম্প্রবল আছে তোমার ? আমার পরামর্শ না, এ-দেশ ছেড়ে অন্য জায়গায় যাই । -কোথায় যাই বলে দেশ ছেড়ে, কে জায়গা দেবে ? -সে কথা আমি জানি ? পরিষমান ষ-সে তুমি বোঝে। আর জ্ঞাতি-শস্তরের সঙ্গে { করে এখানে টিকে থাকতে পারবে না। তুমি । সেই হোল ওদের দেশত্যাগের সন্ত্রপাত। তারপর আশি বন মাসে পড়জোর পরই প্রথমে এল এই ভাতছালা। এখানে প্রথম প্রথম ভালই চলেছিল, পরে একটু অসবিধে। গেল । তার প্রধান কারণ, ভাতছালায় এরা এসেছিল স্থানীয় গোয়ালার ধানের জমি করে আশা দিয়েছিল বলে। কিন্তু দ’বছর হয়ে গেল, ধানের জমির কোনো বন্দোবস্তই আর উঠলো না । এক বেলা খাওয়া হয়। ওদের তো অন্য বেলা হয় না। সেই সময় এই গোয়ালিনী যথেস্ট সাহায্য করেছিল। ওদের । বিরক্ত হয়ে ওরা এখান থেকে উঠে যায়। দবপারে। সেখানে অন্য সবিধে মন্দ ছিল না, কিন্তু ম্যালেরিয়াতে অনঙ্গ-বেী মরে