পাতা:অশনি সংকেত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশনি-সংকেত --সেই বিশ্ববাস মশায়ের দরণ ধানের চাল ! 一苓1 অনঙ্গ-বেী স্বামী-পত্রকে পেট ভরে খাইয়ে সে-রাতে এক ঘটি জল আর একটু গড় খে;ে উপোস করে রইলো । দিন পনেরো কেটে গেল । গ্রামে গ্রামে লোকে একটু সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেচে । চাল পাওয়া বড় কঠিন হয়ে পড়েচে । রাধিকানগরের হাটে, যেখানে আগে বিশ-তিশখানা গ্রামের চাষীদের মেয়েরা চে'ৰ ভানা চাল নিয়ে আসতো, সেখানে আজকাল সাত-আটজন সত্রীলোক মাত্র দেখা যায়। তাও চাল পাওয়া যায় না। বড়তলার মোড়ে আর ওদিকে সামটা বিলের ধারে ক্রেতার দল ভিন্ন পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে চাল কাড়াকড়ি করে নিয়ে যায়। হাটুরে লোকেরা চাল বড় একটা পায় না । আজি দহট আদৌ চাল না পেয়ে গঙ্গাচরণ সতক হয়ে এসে সামটা বিলের ধারে দাঁড়িয়েছে। একটা বড় জিউলি গাছের ছায়ায়। সঙ্গে আরও চার-পাঁচজন লোক আছে বিভিন্ন গ্রামের বেলা আড়াইটে থেকে তিনটের মধ্যে। রোদ খাব চড়া। কয়রা গ্রামের নবীন পাড়াই বলচে-বাবাঠাকুর, আমরা তো ভাত না খেয়ে থাকতি পারি নে, আজ তিন দিন ঘরে চাল নেই । গঙ্গাচরণ বললে-আমার ঘরে আজ দশদিন চাল নেই। আর একজন বললে-আমাদের দ্য দিন ভাত খাওয়া হয় নি। নবীন পাড়ই বললে--কি খেলে ? --কি আর খাবো ? ভাগ্যিস ম্যাগীনীরা দটাে চি’ড়ে কুটে রেখেছিল। সেই বোশেখ মাসে তাই দটাে করে খাওয়া হচ্ছে। ছেলেপিলে তো আর শোনবে না, তারা ভারপেট খায়, আমর থাই আধাপেট । --তা চি’ড়ের সেরও দেখতি দেখতি হয়ে গেল বারো আনা, যা ছিল দ'আনা। -এ কি বিশ্রেবাস করতে পারা যায় ? কখনো কেউ দেখোচে না শনেচে যে চিাড়ের সের বারো অনা হবে ? গঙ্গাচরণ বললে-কখনো কি কেউ শব্নেচে যে চালের মণ ষোল টাকা হবে ? নবীন পাড়াই দীঘনিঃশ্ববাস ফেলে চুপ করে রইল। সে জোয়ান মানষে যদিও তার ঠেকেচ পঞ্চাশের কোঠায় ; যেমন বকের ছাতি, তেমনি বাহার পেশী { ভূতের মত করেও যদি আধাপেটা খেয়ে থাকতে হয়, তবে আর বেচে সখি কি ? আজ দশ-তিন তাই জাটেচে। ওর ভাগ্যে । এমন সময় দেখা গেল আকাইপরের মাঠের পথ বেয়ে তিন-চারটি স্ত্রীলোক চালের কেউ বা বস্তা মাথায় বড় রাস্তায় এসে উঠলো। সবাই এগিয়ে চললো অমনি । মহন্ত মধ্যে উপস্থিত পাঁচ-ছ'জনের মধ্যে একটা হাড়োহাড়ি কড়াকড়ি পড়ে গেল, কতটা চাল কিনতে পারে ! হঠাৎ ওদের মধ্যে করা যেন মনে পড়লো কথাটা, সে জিতে করলে-কত করে পালি ?