পাতা:অসাধারণ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 R অসাধারণ পোষাবে না। এ সব কাজ কাদের জানেন, যাদের ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই । যেমন ধরুন আমাদের। এ বয়েসে কোথায় যাচ্চি বলুন ! বেরিয়েছিলেন রাতুলপুর স্কুল থেকে তার পরের বছরেই। ভবিষ্যতের সন্ধানে। ভবিষ্যৎ তাকে একেবারে প্রতারণা করেনি। অনেকের চেয়ে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেচে। কিন্তু আজি মনে হচ্চে, সব দিয়েও ভবিষ্যৎ তাকে যেন কিছুই দেয়নি। তার স্বপ্নকে কেডে নিযেচে, আশাকে কেড়ে নিয়েচে, ফুরিয়ে গিয়েচেন তিনি, নিঃশেষে ফুরিয়ে গিয়েচেন । যে ভবিষ্যৎ আজি অতীত, তাতে তিনি জেতেননি-ঠকেচেন । আজ তার বয়স-থাক বয়সের কথা । ওটা সব সময় মনে না করাই ভালো । বয়সের কথা মনে না। আনবার জন্যেই তিনি পার্কে বাসা ছেডে দিয়েচেন । তঁাব বাড়ীর কাছে একটা পার্ক আছে, ছোট পার্কিটাতে লোক-পাড়ার পেনসনপ্রাপ্ত জজ, সবজজ, ডেপুটি ম্যাজিস্টেট, বড কেরাণী প্রভৃতি বৃদ্ধের দল নিয়মিত ভাবে বেড়াতে আসে । এ-বেঞ্চিতে ও-বেঞ্চিতে বসবে। আর সামাজিক ও শারীরিক কথাবার্ত্তা বলবে। অমুকের নাতনির বিয়ের কি হোল, অমুকের নাতনি এবার ম্যাট্রিকে বৃত্তি পেয়েচে । মেয়ে ছেড়ে ওরা নাতনিতে নেমেচে । নাতনি সম্বন্ধে এমন উচ্ছসিত হবে যেন কারো নাতনি কোনো দিন ম্যাট্রিক পাশ করেনি। সব নাতনিই অসাধারণ, সাধারণ নাতনি একটাও চোখে পড়েনি । না। তিনির প্রসঙ্গের পরে উঠবে বাতের প্রসঙ্গ, দাতের ব্যথার প্রসঙ্গ, রক্তের চাপের প্রসঙ্গী। যমদূত যেন দণ্ড উচিয়ে বসে আছে পার্কটিার প্রত্যেক বেঞ্চিখানার ওপরে। সে আবহাওয়ায় বসলেই মনে হয় “এবার দিন ফুরুলো সমঝে চলো ইহকাল পরকাল হারিও না-” কিংবা-“মনে কর শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর”