আলাপের সূত্রপাত হল। আমি ইংরেজীতে কথা বল্লাম। তিনি বল্লেন “নেই সম্ঝেতে” ইংরেজী তিনি জানেন না। বোম্বাইএ তাঁর টুপীর দোকান—টুপী আম্দানী করেন জার্ম্মনী, ইটালী প্রভৃতি স্থান থেকে। কথাবার্ত্তায় বুঝলাম য়ুরোপে যখনই যে বন্দরে নেমে ছিলেন তখন, যাঁদের এজেণ্ট তিনি—তাঁদের লোক আপনি এসে তাঁকে আগ বাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ভাঙ্গা হিন্দীতে কথা বলে কার্য্যনির্ব্বাহ করেছে—কারণ গরজ তাদের। মস্ত বড় ব্যবসায়ী—তাই এত খাতির—য়ুরোপের লোক হিন্দীতে কথা বলে! বাঙলা দেশে এমন কোথাও আছে কি?
বাঙালী যে ব্যবসায়-বাণিজ্যে পশ্চাৎপদ তার অন্য কারণও আছে। আমাদের সুজলা সুফলা বাঙ্লা দেশ—তারপর আবার আমাদের ছেলেরা পাখীর ডাকে ঘুমোয় আর পাখীর ডাকে উঠে। বাঙ্লার স্যাঁৎস্যেতে হাওয়ার জন্যে মেকলে বলেছিলেন এদেশে ভাপ্রা তাপের (Vapour bath) মধ্যে থাক্তে হয়। দেশের হাওয়ার দোষ। মিঃ চার্চ্চিল—এখন যিনি একজন প্রধান রাজমন্ত্রী, তাঁর পিতা ভারতসচিব ছিলেন। ভারত ভ্রমণ করে তিনি বলেছিলেন—এদেশে মানুষগুলো জড়ভরত হয়ে আছে―Lulled by the languor of the land of lotus—উলিসিসের বর্ণিত কমলবিলাসী দেশের ঘুমপাড়ানী হাওয়ায় এলিয়ে প’ড়ে। আমাদের দৌড়ানতে হাঁটা, হাঁটায় বসা, বসায় শোওয়া, আর শোওয়ায় ঘুমোনো। বাঙ্লা উর্ব্বরা—একটু চষে বীজ ছড়িয়ে দিলেই অঙ্কুরোদ্গম হয়। এই নদীমাতৃক দেশে আবালবৃদ্ধবনিতাকে রৌদ্রে পুড়্তে পুড়্তে শস্য উৎপাদন কর্তে হয় না! তারপর ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের ফলে যখন দেশের ভয়ানক দুর্দ্দশা হ’ল, লোকাভাব হ’ল, জমি বিনা-আবাদে পতিত রইল, তখন নানাবিধ অসুবিধা দেখে লর্ড কর্ণওয়ালিস বললেন—রাজস্বের পরিমাণ বাঁধাধরা হোক।